শ্রীলঙ্কার দর্শনীয় স্থান সমূহ।Places of interest in Sri Lanka.

0

ক্যান্ডি

ক্যান্ডি

ক্যান্ডিকে শ্রীলংকার সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয়। শ্রীলংকার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ক্যান্ডি। কলম্বো থেকে ১১৫ কিমি. দূরে অবস্থিত এই শহর। এখানেই অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলঙ্কার সবচাইতে বর্ণাঢ্য উৎসব ‘এসালা পেরাহেরা’। ক্যান্ডির দক্ষিণে আছে দেশের সবচাইতে উঁচু এলাকা ‘নুয়ারা এলিয়া’। একে দেশের প্রসিদ্ধ চা শিল্পের কেন্দ্র বিন্দু বলা চলে।ক্যান্ডি শহরের মাঝখানে বিশাল হ্রদ। হ্রদের চারপাশে বুদ্ধের দাঁতের মন্দির, সিংহল সংস্কৃতি কেন্দ্র (এখানে নিয়মিত ঐতিহ্যবাহী নাচ দেখা যায়), উডাওয়াত্তাকেলে অভয়ারণ্য সহ আরও অনেক কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। উডাওয়াত্তাকেলে অভয়ারণ্যে প্রচুর জীব জন্তু আছে। প্রবেশ পথের কাছেই একটা জায়গায় বানরের দল ঘোরাফেরা করে। তবে এরা খুব নিরীহ বানর।ক্যান্ডি শহর থেকে যেতে পারেন টুথ রেলিক টেম্পল। শ্রীলঙ্কার অন্যতম পবিত্র ধর্মস্থান। গৌতম বুদ্ধের দাঁত এনে এই মন্দিরে স্থাপন করেছিলেন রাজকন্যা হেমামালী ও তার স্বামী যুবরাজ দন্ত। তার পরে কত যুদ্ধ! বিদেশি শক্তির লাল চোখ দেখেছে এই মাটি, তার চিহ্ন রয়েছে মন্দিরের আনাচে কানাচে। রয়েছে তথাগতের বোধিবৃক্ষও।




কলম্বো

শ্রীলংকায় সনাতন ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেল পেতে চাইলে কলম্বো (Colombo) ঘুরে দেখার কোনও বিকল্প নেই। এখানে যেমন আছে ঐতিহ্যগত নিস্তব্ধতা, তেমনি আধুনিক উজ্জ্বলতাও। ইতিহাস, সংস্কৃতি, বৌদ্ধ দর্শন ইত্যাদিতে আগ্রহী হলে একটা গোটা দিন রেখে দেন জাতীয় যাদুঘরের জন্য। জাতীয় যাদুঘর দালানটা খুব সুন্দর, সম্ভবত উপনিবেশিক আমলে তৈরি। যাদুঘরের সামনে বট গাছের নিচে শ্বেতশুভ্র ধ্যানরত বুদ্ধের মূর্তি আছে। যারা বৌদ্ধ দর্শনে আগ্রহী তাদের জন্য গোটা শ্রীলঙ্কা জুড়ে দেখার, শোনার, শেখার অনেক কিছু আছে। স্থিরবাদী (থেরাভাদা) বৌদ্ধ দর্শনের ঘাঁটি হিসেবে মনে করা হয় শ্রীলঙ্কাকে।গল ফেস গ্রিন বিচও কলম্বোর অন্যতম উলেখযোগ্য সৌন্দর্যের একটি। যেখানে সুনীল সমুদ্র আর সমুদ্রের ঢেউ ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা। এখন যদিও কমার্শিয়াল সেন্টারে পরিণত হয়ে গেছে এলাকাটা তার পর্তুগিজ এবং ডাচ পিরিয়ডের ফোর্টের আবেদন একটুকু কমেনি। এই এলাকার অসংখ্য দর্শনীয় স্থান একটু কষ্ট করে হেঁটেই দেখে নেওয়া সম্ভব।সাগরের পাশেই বিশাল মাঠে বিকাল বেলা লোকে ঘুড়ি ওড়ায়, যুবক-যুবতিরা বসে প্রেম করে, বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে আসে। খুব মনোরম পরিবেশ।কলম্বো থেকে ১২ কিমি. দূরে অবস্থিত বিচের নাম মাউন্ট লাভিনিয়া। ১৮০৫ সালে তৈরি গভর্নর হাউস এখানে অবস্থিত। যা এখন মাউন্ট লাভিনিয়া হোটেলে পরিণত হয়েছে। এলিফেন্ট শো এর জন্য বিখ্যাত এক চিড়িয়াখানার নাম, দেহিওয়ালা জু। ১১ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই চিড়িয়াখানায় দুর্লভ প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে।




অনুরাধাপুর

অনুরাধাপুর (Anuradhapura) শ্রীলংকার প্রাচীন সভ্যতার ভিত্তিভূমি এবং পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনার জন্য বিখ্যাত। ইউনেস্কো একে বিশ্ব সভ্যতার একটি উত্তরাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। শ্রীলংকার বর্তমান রাজধানী কলম্বো থেকে ২০৫ কিলোমিটার উত্তরে ঐতিহাসিক মালভাথু ওয়া নদীর তীরে এ শহর অবস্থিত। প্রাচীনকাল থেকে এখনো জনবসতি রয়েছে পৃথিবীর এমন শহরগুলোর মধ্যে অনুরাধাপুর অন্যতম। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দী থেকে ১১শ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এ শহর শ্রীলংকার রাজধানী ছিল। এ সময়কালে রাজনৈতিক, বাণিজ্যক ও নাগরিক সুবিধার দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী শহর ছিল অনুরাধাপুর। প্রায় ১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত প্রাচীন শহরটি বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র বলে গণ্য।বর্তমানে অনুরাধাপুরে সিংহলি, শ্রীলংকান তামিল, ভারতীয় তামিল, শ্রীলংকান মুরসহ বিভিন্ন জাতির প্রায় ৫৬ হাজার ৬৩২ জন অধিবাসী রয়েছে। কথিত আছে, হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণে বর্ণিত রাক্ষসরাজ রাবণের রাজধানী ছিল অনুরাধাপুরে। পরে রাম এ রাজধানী পুড়িয়ে দেন।

এডামস পিক

এডামস পিক




___________________________________________

শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের শ্রীপাডা নামক প্রদেশের রত্নাপুরা জেলায় এডামস পিক অবস্থিত যা ২২৪৩ মিটার বা ৭ হাজার ৩৫৮ ফুট উঁচু এবং আকৃতিতে কোণের মত দেখতে। শুধু মুসলিম নন, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ – এই তিন ধর্মের অনুসারীদের কাছেও অতি পবিত্র এই চূড়াটি বা পাহাড়টি। সকলের ধারনা আদম পাহাড়েই আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আঃ) বেহেশত থেকে সরাসরি আগমণ বা পতিত হয়েছিলেন। চূড়াটির চারদিকে সবুজের বিপুল সমারোহ, মাঝেমধ্যে পাহাড়ি উঁচু নিচু টিলা। পাহাড়ি চূড়ার আশপাশে রয়েছে অসংখ্য ছো্ট নদী এবং পাহাড়ি ঝরনা। সব মিলে এক মায়াবী নয়নাভিরাম দৃশ্য।

এডামস পিক (Adam’s Peak) এ রয়েছে একটি প্রকাণ্ড পাথরখণ্ড। এর উচ্চতা ৮ ফুট। এর ওপরেই রয়েছে ওই পদচিহ্ন যা আদম (আঃ) এর পায়ের যে চিহ্ন বলে বিশ্বাস করা হয়। পদচিহ্ন এর পরিমাপ হচ্ছে প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ হচ্ছে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি। বৌদ্ধ ধর্ম মতে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে এই পদচিহ্ন আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কৃত হওয়ার পরে পদচিহ্নের চতুর্দিকে ঘেরাও দিয়ে রাখা হয়েছে। যুগ যুগ ধরে শত শত পর্যটক পরিভ্রমণ করেছে চূড়াটিতে। বিশ্বের চূড়াটিতে যারা পরিভ্রমণ করেছেন তারা এর চতুর্দিকে পরিদর্শন করা ছাড়াও স্পর্শ করে দেখেছেন আদম (আঃ) এর পদচিহ্ন। শুধু শ্রীলংকাবাসী নয়, বাহিরের অনেক দেশের মুসলমান বিশ্বাস করেন হজরত আদম (আঃ) কে যখন পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল তখন তিনি প্রথম পা রাখেন শ্রীলঙ্কার ওই পাহাড়ে। এজন্যই মুসলমানরা সেই পাহাড়কে অসীম শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। আর এজন্যই এর নাম দেওয়া হয়েছে আদম’স পিক বা এডাম’স পিক (Adam’s Peak) বা আদমের পাহাড়। এ পাহাড়ের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে রহস্য। এ পাহাড়ের চূড়ায় যে পদচিহ্ন রয়েছে সেখানে পৌঁছা খুব ঝুঁকিপূর্ণ এডভেঞ্চার। তবে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে গিয়েছেন। তারা নিজের চোখে ওই পায়ের ছাপ দেখে বিস্মিত হয়েছেন।




সিগিরিয়া রক

সিগিরিয়া রক

শ্রীলঙ্কার একটি অপূর্ব সুন্দর গুহামন্দির যার নাম সিগিরিয়া। ৬০০ ফুট উঁচু এক পাথর কেটে দুর্ভেদ্য প্রাসাদ বানিয়েছেন এক রাজা। প্রাসাদটি অনেকটা মৌমাছির চাকের মতো। এই পাথর সিগিরিয়া রক নামে বিশ্ব বিখ্যাত। সিগিরিয়া রকের আরেক নাম লায়ন রক চৌদ্দ শতক পর্যন্ত এটি বৌদ্ধমন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হতো।দুর্গের পাথরের প্রবেশপথটি একটি বিশাল সিংহমূর্তির মতো। সিংহমূর্তির অনেকটা এখনো টিকে আছে। প্রাগৈতিহাসিক গুহাটি খ্রীস্টপুর্ব ৫০০ শতাব্দী থেকে সাধু সন্যাসীদের আশ্রম হিসেবে ব্যবহৃত হত। শোনা যায় দক্ষিণ ভারতীয় রাজা কাশ্যপ কোন যুদ্ধে পড়াজিত হয়ে ৪৯৫ খ্রীস্টাব্দ নাগাদ এই স্থানে আশ্রয় নেন এবং সুরক্ষিত একটি দূর্গ গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে এটি বৌদ্ধ মঠে পরিণত হয়। বর্তমানে এটি শ্রীলংকার একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র এবং বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here