স্বপ্নের শহর দার্জিলিং ভ্রমন গল্প

0

১০ই অক্টবর ২০১৪ রাত ৭.৪৫ এ চলে গেলাম আরামবাগ শ্যামলী কাউন্টার এ।৮ টায় মিনি বাস এ করে চলে গেলাম কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড। মিনি বাস থেকে নেমে দেখি শ্যামলী পরিবহন এর এসি বাস দাঁড়িয়ে আছে।তারপর ব্যাগ নিয়ে ওই বাস এ উঠে পরলাম। বাস ছাড়তে ছাড়তে ৯.৩০ বেজে গেলো।বাস দৌড়ে ছুতে চলছে, হটাত শুরু হয়ে গেলো ভয়াবহ জ্যাম।৪ ঘন্টার মত জ্যাম পেরিয়ে রাত ৪টায় পৌঁছলাম বগুড়া হাইওয়ে রেসটুরেন্ট ফুড ভিলেজ এ। ৩০ মিনিট বিরতি দেবার পর আবার শুরু হলো বাসের দৌড়। হটাত চোখ মেলে দেখি সকাল হয়ে গেছে আমাদের বাস তিস্তা বাঁধের উপর দিয়ে যাচ্ছে। ঘড়িতে সময় তখন ৬ টার মত। সুপারভাইজার সাহেব দেখি সবার পাসপোর্ট নিয়ে নিচ্ছেন সাথে ৫০০ করে টাকা নিচ্ছেন ভ্রমনট্যাক্স বাবদ। আমরাও আমাদের পাসপোর্ট গুলা বের করে টাকাসহ দিয়ে দিলাম। আমরা তিনজন বন্ধু যাচ্ছি ঘুরতে।এর মধ্যে আমি এবং রুবেল এই প্রথম দেশের বাহিরে যাচ্ছি আর শরিফতো এর আগে দুবাই থেকে এসেছে ৪ বছর। বেলা তখন প্রায় ৭.৪০ মিনিট বাস বুড়িমারি বর্ডার এ এসে থামল। বাস থেকে সবাই নেমে শ্যামলীর রেস্ট হাউজ এ সবাই রেস্ট নিল।

বর্ডার খুলবে সকাল ৯ টায় তাই ওয়েট করতে লাগলাম।এখানে বলে রাখি আমার এই লেখার উদ্দেশ্য যারা ভ্রমন এ যাবেন সবার যেন কাজে আসে, তাই আমি এর নিচ থেকে পুরো লেখাটা পয়েন্ট আকারে ভাগ করে লিখবো যেনো সকলের বুঝতে সুবিধা হয়।বাংলাদেশ ইমিগ্রাশনঃসকাল ৯টায় বর্ডার খুললো একটা ভ্যান এ করে ইমিগ্রাসন অফিস এর সামনে নামলাম ভ্যান ভাড়া ৩০ টাকা দিলাম তিনজন,অথচ হেটে আসলে ২ মিনিট লাগত। যাই হোক একটা অফিস বিল্ডিং এ ডুকে দেখি একটা রুম এ সবাই সিরয়াল এ আছে , যার নাম ডাকে সে সামনে দাড়ায় এবং তার ছবি তুলে এবং তার ছুটির দরখাস্ত জমা নেয়।

একটা কথা মনে রাখবেন যখন আপনি ভারত ভিসার জন্য যে application জমা দিছিলেন তখন আপনার ছুটির একটা application ও জমা দিছিলেন অবশ্যই তার একটা কপি আপনার কাছে রাখবেন,এই কপিটাই ইমিগ্রাশন অফিস এ জমা দিতে হবে।সাথে না থাকলে আবার ৩০০ টাকা জরিমানা করবে।যাই হোক লাইন এ দাঁড়িয়ে ছবি তুলে চলে গেলাম বর্ডারএ।প্রথমে বিডিয়ার চেকপোস্ট, পাসপোট দেখে ছেড়ে দিলো,চলে গেলাম সামনে হেটে। একটা টিনের ঘর এর ভিতর বাংলাদেশ ইমিগ্রাসন অফিস ওখানে একে একে পাসপোট দেখে সিল মেরে দেয় এবং চা পান এর জন্য কিছু নেয় আরকি,(ঘুস)।

আমাদের তিনজন এর পাসপোট একসাথে দিলাম,বললো কোথায় যাবেন?আমি বললাম দারজিলিং যাবো,বললো কেনো যাবেন? আমি বললাম ঘুরতে যাবো।সাথে কতো ডলার আছে?আমি বললাম তিনজনের কাছে ৬০০ডলার আছে,বাংলা টাকা কতো আছে ?আমি বললাম ২-৩ হাজার হবে বলেই মানিব্যাগ বের করতে পকেট এ হাত দিলাম বললো দেখাতে হবেনা তিনজন ১০০ করে ৩০০ টাকা দিন।আমি আগেই ৩০০ টাকা আলাদা করে রেখেছিলাম,সাথে সাথে বের করে দিলাম। ব্যাস তিনজনের পাসপোট এ ধাপ ধাপ করে সিল মেরে দিলো আর জিজ্ঞাসা করলো সাথে Laptop or Camera আছে কিনা?আমি বললাম ২ টা ডিজিটাল ক্যামেরা আছে এবং একটা লেপটপ আছে।তখন সিল এর উপর তিন পাসপোট এ তিনটা লিখে দিল এবং পাসপোট হাতে দিয়া বললো পুলিশ কে দেখিয়ে ওপারে চলে যান।রুম থেকে বেরিয়ে দেখি পুলিশ বসে আছে একটা কাঠের চেয়ার এ উনাকে পাসপোট তিনটা দিলাম উনি দেখে বললো ঠিক আছে চলে যান।

আমরা তিনজন হেটে বাংলদেশের শেষ লাইন পার করে ডুকে পরলাম ভারত।মানে আমরা এখন বিদেশ আছি ভাবতে পারছিনা,তবে খুব একটা মনে হয়নি যে এটা বিদেশ।যাইহোক এখানে একটা ব্যাপার বলে রাখি আপনি পাসপোট এ যত ডলার এন্ডুস করিয়েছেন তার বেশি ডলার বা টাকা নেওয়া অবৈধ। তাহলে বেশীটাকা কিভাবে নিবেন? আপনি যত ডলার এন্ডুস করিয়েছেন ওগুলা পকেট এ রাখুন বাকি টকা বা ডলার ব্যাগ এর কোথাও লুকিয়ে রাখুন যেন ব্যাগ খুলে চেক করলেও না পায়।এই যেমন ধরেন প্যান্ট এর পকেট এ রেখে ওটা ভাজ করে ব্যাগ এ রাখলেন আথবা ব্যাগ এর কোনও চোরা পকেট থাকলে ওখানে রাখুন, মোটকথা যেভাবে আপনি সুবিধা মনে করেন সেভাবেই রাখুন।ভয় পাওয়ার কিছু নাই এতো বেশি চেক করেনা যে আপনি ধরা পরে যাবেন। আর যদি ধরা পরেই যান তাহলে বলবেন যে কিছু কেনাকাটা করবো পরিবার এর জন্য।

মোটামুটি এই সিসটেম এ বাংলাদেশ ইমিগ্রাসন পার হতে হয়, অথবা আমি এভাবে পার হইসি,কারন অন্য কেউ হয়তো অন্যভাবেও পার হতে পারেন আমারতো জানা নাই।ভারত ইমিগ্রাসনঃভারত বর্ডার এ ডুকে পুলিশ এর কাছে তিনজনের পাসপোর্ট দিলাম উনি চেক করে বললো যান। একটু এগিয়ে গিয়ে একটা টিনের ঘর এর মত সামনেই বসা ভারতীয় পুলিশ আমাকে দেখে ডাক দিলো, নানান প্রশ্ন করলো।কোথায় যাবো,কেন যাবো,আমি কি করি ,কোথায় থাকবো……………।তারপর ব্যাগ খুলে সব চেক করলো। জিজ্ঞাসা করলো সাথে কতো টাকা আছে?আমি বললাম ২০০ ডলার আছে,বাংলা টাকা কতো আছে?আমি বললাম ৩-৪ হাজারের মত,বেশী নাইতো?জিনা এর বেশি নাই। ঠিক আছে যাও।আসলে আমায় এতো চেক করার একটা কারন হচ্ছে আমার মুখে দাড়ি আছেতো তাই সন্দেহ বেশি করসে জঙ্গী কিনা…………?

রুবেল এবং শরীফ ভালোভাবেই পার পেয়ে গেলো,তেমন একটা চেক করেনি ওদের। আমি সামনে এগিয়ে যেতেই দেখি কয়েকজন লোক দাড়িয়ে আছে, জিজ্ঞাসা করলো শ্যামলী কিনা?আমি বললাম হা আমরা শ্যামলীর যাত্রী,বলল পাসপোর্ট দেন,আমি তিনজনের পাসপোর্ট দিয়া দিলাম।আর একজন বললো আমার সাথে আসও,পিছন পিছন গেলাম,বাজারের মত কয়েকটা দোকান আছে ওইখানে শ্যমলির মানি এক্সচেঞ্জ এর একটা দোকানে নিয়া যাইয়া বলল টাকা ডলার যা আছে এখান থেকে ভাঙ্গিয়ে নাও,ভিতরে রেট কম পাবে। আমরা আমাদের সব ডলার এবং টাকা ভাঙ্গিয়ে নিলাম। মনে রাখবেন এখানেই আসলে রেট সবথেকে বেশি পাবেন এবং ওদের সব রুপিগুলাতে সাইন করা থাকে তাই জাল নোট পাওয়ার সম্ভাবনাও নাই।টাকা এক্সচেঞ্জ করে আসলাম ভারত ইমিগ্রাসন অফিসে। সিরিয়াল এ আমাদের তিনজনের পাসপোর্ট আসলো,আলাদা একটা ফর্ম আছে ওখানে সব ঠিকানা লিখলো,জিজ্ঞাসা করলো কোথায় যাবেন?দার্জিলিং যাবো।কোন হোটেলে থাকবেন?যেকোনো হোটেল।

(যদি কোনো হোটেল আগে বুক দেওয়া থাকে ওই হোটেল এর নাম বলবেন,আর বুক না থাকলে আমার মত যেকোনো হোটেল বলবেন।)ফর্ম এ লিখে পাসপোর্ট দিয়া বললো যান ছবি তুলার লাইন এ দাঁড়ান।লাইন এ দাড়ালাম,আমাদের সিরিয়াল আসলো ভিতরে ডুকে একটা চেয়ার এ বসলাম, পাসপোর্ট টা দিলাম । বারকোড স্ক্যানার এ দিলো সাথে সাথে সব ইনফো পিসি তে চলে আসলো।তারপর ওয়েব ক্যামেরা দিয়া ছবি তুলে পাসপোর্ট দিয়া দিলো,রুম থেকে বেরিয়ে বাহিরে বসা আরেক পুলিশ উনার কাছে দিলাম ,উনি সাইন করে পাসপোর্ট দিয়া দিলো। ব্যাস এই পর্যন্তই শেষ ভারতীয় ইমিগ্রাসন এর কাজ।এভাবে সবাই লাইন এ দাড়িয়ে কাজ শেষ করলো একে একে।এই ফাকে আমরা একটু নাস্তাপানি কিনে নিলাম বাস এ খাবার জন্য।

একটা কথা মনে রাখবেন এইসব লাইন এ ধাক্কাধাক্কি বা আগে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না,কারন এখানে আগে পরে করে কোনো লাভ নাই,সবার কাজ শেষ না হলে আপনার বাস ছাড়বেনা,অতএব তাড়াহুড়া করা বোকার শামিল। বেলা ১১ টায় আবার বাস এ উঠলাম। শ্যামলী পরিবহন এর ই এসি বাস তেমন খারাপনা, আবারও তেমন ভালোও না, মোটামুটি চলনসই। যাইহোক আবার বাস ছুটে চলছে আপন গতিতে। প্রায় ২ ঘন্টা পর শিলিগুড়ি এসে নামলাম। নেমে আগে একটা Vodaphone এর সিম কিনে নেট নিলাম ২ জিবি ৪৯৯ রুপি। আর সিম এর দাম নিলো ২৫০ রুপি। আমাদের দেশের তুলনায় ওদের দেশের নেট প্যাকেজ গুলা একটু জটিল এবং খরচ ও বেশী। আপনি নেট প্যাকেজ নিতে হলে ওদের দিয়া নিতে হবে,আপনি নিজে ম্যাসেজ দিয়া কোনো প্যাকেজ নিতে পারবেন না।

আমার এক বড় ভাই কদিন আগে ঘুরে এসেছিলো তার ব্যাবহার করা এয়ারটেল সিম ও নিয়া গেছিলাম সাথে। ওটাতে আবার ১ মাস এর পাওয়ার করা ছিল বাংলাদেশের জন্য, পাওয়ার মানে ৪০ রুপি কেটে নিয়ে একটা সার্ভিস চালু করে দেয় যার পর আপনি বাংলাদেশের যে কোনো নাম্বার এ প্রতি মিনিট ২ রুপি করে কথা বলতে পারবেন।তাই এয়ারটেল সিম এ ২০০ রুপি রিচারজ করে নিলাম। পেটে খুব খুধা অনুভব করলাম। শ্যামলী কাউন্টার এর বিপরীত পাশে দেখি ঢাকা হোটেল নামে একটা খাবারের হোটেল। ওখানে গিয়া দেখি জায়গা খালি নাই, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সিট খালি হলো তখন আমরা বসে দুপুরের খাবার খেলাম। মাছ,সবজী,ডাল,ভাত। আমাদের পূর্বের প্লান ছিলো আমরা নেপাল ও যাবো। তাই একটা অটো ভাড়া করে চলে গেলাম রানিগঞ্জ বর্ডার,সেখান থেকে কাকরভিটা হয়ে নেপাল ঘুরলাম ৩ দিন। নেপাল ঘুরার সেই গল্প বলবো অন্য কোনো একদিন।

১৪ ই অক্টবর ২০১৪ বেলা ১২ টার দিকে ফিরে আসলাম আবার শিলিগুড়ি । চলে গেলাম দার্জিলিং জীপ স্টানে, শ্যামলী কাউন্টারের একটু সামনে হেঁটে গেলেই দার্জিলিং স্ট্যান্ড।শিলিগুড়ি টু দারজিলিংঃ লোকাল জিপে উঠলাম ভাড়া ১৫০ করে। জীপ এর মাঝের সিটে আমরা তিনজন বসলাম,একটু পর দেখি আরও একজন উঠে আমাদের পাশেই বসলো। খুব আঁটসাঁট লাগছিলো। তবুও চুপচাপ বসে রইলাম। গাড়ি পুরা ফিলাপ। সামনে ২জন মাঝে ৪ জন আবার পিছনে ৪ জন। শহরের পথ ধরে ছুটে চলছে জীপ ৭০-৮০ মাইলেস নিয়ে। মনে মনে খুব আনন্দ লাগছিলো, সব কিছু সপ্নের মত লাগছিলো,তখন ও বিশ্বাস হচ্ছিলো না আমরা দার্জিলিং যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর গাড়ী বায়ে মোড় দিয়ে এক চাবাগান এর ভিতর দিয়ে চলতে লাগলো। আসলে জায়গাটা আর্মি ক্যাম্প ছিলো , খুব সাজানো গুছানো রাস্তা গুলা,দেখে যেন মনটা জুড়িয়ে গেলো। তারপর গাড়ী ডানে মোড় দিলো আর চোখের সামনে স্পষ্ট হতে লাগলো অনেক দুরের ওই পাহাড়গুলা যেনো হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম কতো উচু উচু পাহাড়। হটাত চোখ গেলো গাড়ির স্পীড মিটারে চোখছানা আমার বড় হয়ে গেলো,সোজা আর সমতল রাস্তা পেয়ে ড্রাইভার ভাই গাড়ী চালাচ্ছেন ১১০-১২০ মাইলেস এ। ক্যামেরাটা বের করে জানালার পাশে বসে শরীফ ভিডিও করে যাচ্ছে। আমি ওকে বকা দিলাম এগুলা ভিডিও করার দরকার নাই, ক্যামেরা পরে যাবে,চার্জ শেষ হয়ে যাবে।পরে যখন ভিডিও গুলা দেখলাম বুজলাম ওকে বকা দেওয়াটা ভুল ছিলো।কতো সুন্দর দৃশ্য গুলা, আহ! আজও যখন দেখি খুব ইচ্ছা করে আবার ছুটে যাই।

গাড়ী ছুটে চলছে আপন গতিতে,একটু পর একটা টোল পরলো ঠিক কি বাবদ বুজলাম না। ড্রাইভার টোল দিয়ে দেখি পাহাড়ি রাস্তার উপর উঠছে। আকর্ষণ যেন শুধু বাড়তেই থাকলো। এর আগেও আমি বান্দারবানে অনেকবার গিয়েছি পাহাড়ি রাস্তায় চরেছি , কিন্তু এই রাস্তাগুলা যেনও একটু আলাদা আন্যরকম সুন্দর। অনেক দূরে পাহাড়ের উপর দেখি ছোট শহরের মত দেখা যায়।আমি আর রুবেল মনে করলাম ওটাই বুঝি সপ্নের দার্জিলিং, পাহাড়ি রাস্তা তাই বুজি এতো সময় লাগে যেতে। ওটা যে আমাদের ধারনা ছিলো মাত্র তা বুজতেও ২ ঘণ্টা লাগলো। মানে ওইখান থেকে আরো অনেক অনেক দূরে দার্জিলিং। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে ছুটে চলছে জীপ। ডানে, বামে, বামে, ডানে, উপরনিচে, নিচে , উপরে, ড্রাইভার কি পাগল হয়ে গেলো? গাড়ীটা এভাবে চালাচ্ছে কেন? আসলে পাগল ড্রাইভার হয়নি রাস্তা গুলা যে পাহাড়ি সেটা ভুলে গেসিলাম। কিযে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর পাহাড়ি বাক দেখে যেন দম বন্ধ হয়ে যায়। এই বুজি গেলাম রে,আর বুজি প্রিয় মুখগুলি দেখতে পাবনা। পাহাড়ি প্রতিটা বাঁক শেষেই যেনো নতুন করে জীবন ফিরে পাই। যেমন ভয় কাজ করছিলো ঠিক তার চেয়ে বেশী রোমাঞ্চিত ছিলাম দার্জিলিং ঘুরার সপ্নে । কি অদ্ভুদ সুন্দর রাস্তা গুলি, মাঝে মাঝে আবার দেখা হয়ে যায় ঝর্নার সাথে। উপর পাহাড় থেকে পাথুরে পথ বেয়ে নেমে যাচ্ছে এমন অনেক ঝর্নার পানি। ইচ্ছে করছিলো নেমে দু একটা ছবি তুলে নেই কিন্তু বলার সাহস হলোনা, অন্য যাত্রীরা কি বলে এই ভয়ে। যাচ্ছি তো যাচ্ছি………।যাচ্ছি তো যাচ্ছি………।যাচ্ছি তো যাচ্ছি………।যাচ্ছি তো যাচ্ছি………।

পথ যেনো আর ফুরায় না। হটাত হটাত উল্টো দিক থেকে চলে আসে জীপ, ট্রাক তখন যেনও জীবনটা আরো ভয়ঙ্কর লাগে।তবে সব ড্রাইভারদের সালাম জানাই তাদের অতি সুনিপুণ ড্রাইভিং এর জন্য। প্রতিটা ড্রাইভার এর যেনো প্রতিটা বাঁক মুখস্ত করা, কোথায় ব্রেক চাপবে, কোথায় এক্সিলেটোর দিবে সবকিছু এতটাই পারফেক্ট জেনো অটোমেটিক টাইমার সেট করা আছে।দেখে খুব রেসপেক্ট করতে ইচ্ছা হলও। সত্যি তারা খুব ভালো ড্রাইভিং করে, এটা আপনি না চড়লে বুজতে পারবেন না। একটা সময় এসে কেমন যেনো একটা অস্থির লাগছিলো পথ শেষ হয়না কেনো? আর কতো যায়? একের পর এক বাড়ি ঘর শহর পেরিয়ে সব পিছনে ফেলে চূড়ায় শুধু উঠছি তো উঠছি। হটাত ড্রাইভার একটা দোকানের সামনে গাড়ী দাড় কড়িয়ে বলল চা নাস্তা কড়ে নেন । জিজ্ঞসা করলাম ভাই আর কতক্ষণ লাগবে?বললো আরো ৪০ মিনিট এর মতো লাগবে।শুনে যেনো থ খেয়ে গেলাম বলে কি………!গাড়ী থেকে নেমে চা এবং বিস্কুট খেলাম।১০ মিনিট পর আবার ছুটল গাড়ী আরো উপরে। উপরে তাকিয়ে যেনো ভয় পেয়ে গেলাম,কিরে বাবা…!

মনে হলো যেন মাথার উপর দিয়ে গাড়ী চলছে,যেনো একটু লাইন ছাড়া হলেই উপরে এসে পরবে। দেখতে দেখতে গুম রেলওয়ে স্টেশন চলে এলাম।মনে পরে গেলো অনেক গানের কথা।কতো গানের শুটিং হয়ছে এই স্টেশন এ। হটাত চোখ চড়ক গাছে উঠে গেলো,এ কি দেখছি……! চোখের সামনে কাঞ্ছনজঞ্জা এতোটা স্পষ্ট ভেসে উঠলো নিজের চোখ কে অবিশ্বাস হচ্ছে। সত্যি আমি কি বাস্তবে না সপ্নে আছি।শুধু অপলকে চেয়ে রইলাম।যেনো আমাদের স্বাগতম জানাতেই আজ মেঘের আভা ছাড়িয়ে দিব্যি জেগে উঠেছে।দেখতে দেখতে চলে এলাম দার্জিলিং রেলওয়ে স্টেশন। গাড়ী থেমে গেলো, বুজলাম এটাই দার্জিলিং। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম, খোদার অশেষ মেহেরবানি কোনো সমস্যা ছাড়াই পৌঁছে গেলাম দার্জিলিং।হোটেল খোজাঃ গাড়ী থেকে নামতেই কয়েকজন দালাল এসে ভিড় জমালো,হোটেল অফার করতে লাগলো। আমরা কারো কথায় কান দিলাম না। শুনেছি দার্জিলিং এর সবচেয়ে উঁচু জায়গার নাম মেইলচুড়া তাই আমাদের ইচ্ছা ওখানেই কোনো মোটামুটি মানের হোটেল উঠা। তাই দালালের কথায় কর্ণপাত না করে পাম্প এর উপরের বা দিকের রাস্তা দিয়ে উঠে গেলাম মেইলচুড়ায়।

ব্যাগ কাধে নিয়ে ওইটুকু পাহাড়ের উপরে উঠতেই যেনো জানটা বেরিয়ে গেলো।কারন বিগত ৪ রাত ধরে কোনো ঘুম নাই আমাদের কারো চোখে,প্রতি রাতেই বাস জার্নি করেছি।কারন আমাদের হাতে যে সময় আছে তাতে নেপাল এবং দার্জিলিং দুটাই শেষ করার ইচ্ছা ছিলো। শরীর এতো ক্লান্ত লাগছে যেনো কোনোরকম একটা হোটেলে উঠতে পারলেই হলো।প্রথমে একদম উচুতে একটা হোটেল এ গেলাম।উনি ভাড়া চাইলো ৩৫০০ রুপি,কিন্তু আমাদের বাজেট ১২০০-১৫০০ তাই ফিরে এলাম।আর একটা হোটেলে গেলাম ম্যানেজার বললো রুম আছে কিন্তু বাংলাদেশীদের আমরা রাখিনা।কথাটা শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। পরে জানলাম এখানে এমন অনেক হোটেল আছে যেখানে বাঙ্গালী এলাউ না। আমি জানিনা কেনো ওরা বাংলাদেশীদের এলাউ করেনা তবে আমি এর খুব নিন্দা জানাই। যাইহোক একটু নিচে নেমে দেখি সিঁড়ি দিয়ে কয়েকধাপ নিচে নামলে অনেক হোটেল আছে মেইন রোড এর পাশেই।তাই চলে গেলাম সিঁড়ি দিয়ে একটু নিচে।হোটেল সাগরিকা।

ম্যানেজার রুম দেখালো,রুম থেকেই কাঞ্চনজঞ্জা দেখা যায় জানালা দিয়ে,এবং ২ টা বেড।একটা সিঙ্গেল একটা ডাবল বেড।আমাদের খুব পছন্দ হলো, ভাড়া জিজ্ঞাসা করলাম, বললো ২০০০ রুপি।আমি বললাম ঠিকাছে আমরা তাহলে একটু দেখি, আমাদের বাজেট আর একটু কম। ম্যানেজার বললো কেমন বাজেট আপনাদের এই রুম এর জন্য?আমি বললাম ১৫০০ রুপি।উনি বললো ঠিক আছে আমি আপনাদের রুম দিলাম কিন্তু কাওকে এই রেট বইলেন না। আমরা বললাম ঠিক আছে।জানিনা বেশি নিলো না কম।তবে রুম এবং সার্ভিস বিবেচনা করে এবং অন্যান্য হোটেল ঘুরে মনে হয়নি আমাদের ভাড়া বেশি হইসে। প্রথমে দুইদিনের ভাড়া দিয়ে দিলাম ১৫০০+১৫০০=৩০০০ রুপি এবং ৩০ টাকা করে অনলাইন কি যেন ফিলাপ করার কথা বলে ৩০*৩০=৯০ রুপি নিলো।সাথে পাসপোর্ট এর ফটোকপি এবং এক কপি করে ছবি নিলো।মনে রাখবেন আপনি যে হোটেলেই থাকেন না কেনো আপনার এক কপি ছবি এবং পাসপোর্ট এর ফটোকপি লাগবে।তাই আগে থেকেই এই জিনিস গুলা সাথে নিয়া যাবেন এক্সট্রা কয়েক কপি,যখন যেখানে কাজে লাগে তখন কাজে লাগাতে পারবেন। আপনি মোবাইল এর সিম কিনতে গেলেও পাসপোর্ট এর ফটোকপি এবং ছবি লাগবে।

অবশেষে টাকা পরিশোধ করে রুম এ গেলাম। ব্যাগ রেখে খাটে এলিয়ে পরলাম।তখন বাজে প্রায় ৩ টা । গরম পানিতে গোসল করে দিলাম এক ঘুম,এক ঘুমে একদম সন্ধ্যা।হোটেল ঠিক করার সময় লক্ষ রাখবেন হোটেলে যেনো অবশ্যই গরম পানির ব্যবস্থা থাকে নাইলে আপনি বরফ হয়ে যাবেন ঠান্ডায়,হয়ত গোসলই করবেন না। আর যদি পারেন ভিউ সাইট রুম নিবেন, যেনো রুম থেকেই বাহিরের সব কিছু দেখা যায়।তাহলে রুমে থাকাকালীন ও খুব ভালো লাগবে। আর দার্জিলিং এর হোটেল ভাড়া তেমন বেশি না।যতো নিচের দিকে হোটেল নিবেন ততো কমদামে নিতে পারেবেন। সন্ধায় বের হলাম দার্জিলিং শহরে।রাতের দার্জিলিং দেখতে খুব সুন্দর।বেশ সাজানো গুছানো এবং ক্লিন একটা চিত্র।চলে গেলাম বিগবাজার এ মেইল চুড়া থেকে একটু নিচের দিকে।কিছু কেনাকাটা করতে করতে প্রায় ৮.৩০ বেজে গেলো।রুমে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে ডিনার করতে বের হলাম।তখন দেখি প্রায় অনেক দোকান ই বন্ধ হয়ে গেছে।একটা কথা মনে রাখবেন দার্জিলিং শহর খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে গুছিয়ে নেয়।

মানে হচ্ছে রাত ৮টা থেকে ৯ টার মধেই সব দোকান বন্ধ হয়ে যায়।তাই কেনাকাটা এবং ডিনার রাত ৮.৩০-৯.০০ টার মাঝেই সেরে ফেলুন।খাবারের রেস্টুরেন্টঃ খাবার দাবার এর দাম মোটামুটি রিজনেবল।১৩০ রুপির মধ্যে আমরা Fish Meal খাইসি,মানে ভাত,সব্জী,ডাল যতোখুশি সাথে মাছ এবং ঝোল। রুটির দাম ১০ রুপি থেকে শুরু। আমরা সব বেলাতে সবজি আর কোনও বেলা মাছ খাইতাম। আর আপনি যদি মুসলিম কোনো হোটেল এ খেতে চান তাও পারবেন। মেইলচুরার উপরেই ২ টা মুসলিম হোটেল আছে। তবে আমরা যে কয়দিন ছিলাম সব বেলা DAFAY MUNAL Restaurant এ খাবার খাইসি।ভালোই লাগছে,আমাদের দুপুরে এবং রাতে বিল আসতো ৩৭০-৪১০ এর মধ্যেই। আপনি চাইলে যে হোটেল এ থাকবেন ওই হটেলেও খেতে পারবেন।তবে দামটা যাচাই করে নিবেন। প্রতি বেলা ওদের রেস্টুরেন্ট এ খেতে খেতে ওদের সাথে খুব ভালই একটা রিলেশন হয়ে গেলো। ওদের রেস্টুরেন্ট টাও এমন জায়গায় ছিলো টেবিলে বসেই কাঞ্চনজঞ্জা দেখা যেতো।আসা করি খাবার দাবার এ তেমন কোনো সমস্যা কারো হবেনা।সাইট সিয়িংঃরাতের ডিনার শেষে হোটেলে ফিরে গেলাম,

পরদিন দার্জিলিং এর সাইট সিয়িং এ বের হবো তাই আজ রাতেই গাড়ী ঠিক করে রাখতে হবে।কারন টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখতে যেতে হলে আপনাকে ভোর ৪ টায় উঠতে হবে।সে জন্য আগের দিন গাড়ী ঠিক করে রাখতে হয়।আমরা হোটেল ম্যানেজার এর কাছে গেলাম।উনি আমাদের ৭ পয়েন্ট এবং ৩ পয়েন্ট এবং রক গার্ডেন ঘুরাবেন একটা প্রাইভেট কার এ,খরচ পরবে ৩৫০০ রুপি।আমরা বলে ৩০০০ রুপিতে রাজি করালাম।তার আগে হোটেলের বাহিরে আলাপ করে দেখছিলাম ওরা ২৮০০ রুপিতে রাজি ছিল যেতে,তবে সব গুলা একদিনেই দেখাবে।আর হোটেল ম্যানেজার বললো আপানারা চাইলে দুইদিনে ও দেখতে পারেন,তাছাড়া হোটেল এর তত্তাবধানে থাকাটা সেভ মনে করে উনাকে ১৫০০ রুপি এডভান্স করলাম।প্রতি হোটেলেই সাইট সিয়িং এর ব্যবস্থা আছে, অতএব চিন্তার কোনো কারন নাই। আমরা ঠিক করলাম যেহেতু আমরা ক্লান্ত, আজ রাত আমাদের ফুল রেস্ট করতে হবে।তাই আমরা একদিন পর টাইগার হিল যাবো।আর কাল বাকি সব পয়েন্ট ঘুরে শেষ করবো।পরে বুজেছিলাম টাইগার হিল একদিন পরে যাওয়াতে কতো বড় উপকার হয়েছিলো।একদিকে যেমন আমরা নিজেরা একটু রেস্ট নিতে পারসি তেমনি একদিন পরে কাঞ্চনজঞ্জা ও স্পষ্ট দেখতে পারসি।আগের দিন নাকি বৃষ্টির জন্য কেউ দেখতে পারেনি।

যাইহোক রুমে গিয়ে লেপ মোরা দিয়ে সুয়ে পরলাম দেরি না করে,চোখে খুব ঘুম ছিলো।সকাল প্রায় ৭ টা ঘড়িতে এলারম দেওয়া ছিলো, চোখ মেলে দেখি আকাশের মেঘগুলা কুয়াশা হয়ে জানালা দিয়ে ডাকছে,আর কতো ঘুমাও এবার উঠ ,দেখো প্রকৃতি কেমন রুপে সেজেছে আজ।বিছানা থেকে উঠে জানালা দিয়ে অনেক্ষন তাকিয়ে উপভোগ করলাম দূর পাহাড়ের মনোরম দৃশ্যগুলা, সত্যি কি অপরূপ সুন্দর মহান আল্লাহর সৃষ্টি। চটজলদি করে গোসল সেরে নিলাম সবাই,নাস্তা খেয়ে আবার আসলাম হোটেলে।তখন বাজে সকাল ৯টা। গাড়ীর ড্রাইভার আসলো আমাদের নিয়া গেলো। মারুতি সুজুকী গাড়ী দেখেই মনটা জুড়িয়ে গেলো, ভাবতে ভালোই লাগলো অন্তত ২ দিনের জন্য হলেও গাড়িটা আমাদের।যাই হোক আমরা উঠে বসলাম গাড়িতে। ড্রাইভার ও ছিলো আমাদের মতই ইয়ং বয়সের,ওর নাম ছিলো ঠিক মনে পরছেনা । ওর সাথে শরিফের খুব ভাব জমলো,কারন আমাদের মধ্যে শরীফ ই সবচেয়ে ভালো হিন্দি বলতে পারে। ওর সাথে যে কেউ হিন্দিতে কথা বলতে গেলে বুঝতেই পারবেনা যে সে বাংলাদেশী।

যাইহোক শুরু আমরা শুরু করলাম আমাদের সাইট সিয়িং,গাড়িতে বাজছে Happy New Year মুভির গান,ভালোই লাগছিলো শুনতে।জাপানিজ টেম্পল এবং পেস প্যাগোডাঃ প্রথমে আমরা গেলাম জাপানিজ টেম্পল ও পেস পেগডা দেখতে। মুল শহর থেকে যেতে সময় লাগবে ১০ মিনিট।মুল দর্শনিও স্থানের একটু আগেই ড্রাইভার নামিয়ে দিয়ে বলল একটু হেটে গেলেই পৌঁছে যাবেন, আমি যদি গাড়ী নিয়ে যাই তাহলে বের হতে অনেকটা সময় নষ্ট হবে বের হবে,কারন এখানে রোড এ খুব জ্যাম এবং অনেক গাড়িও ছিলো।তাই আমরা নেমে হেটে গেলাম।পাহাড়ের একটু ঢালুতে নেমে সিঁড়ি দিয়ে আবার একটু উপরে উঠুলাম।শান্তির একটা এলাকা,যেখানে নাই কোনো শোরগোল। দরজার সামনে সিংহ এর দুটা মূর্তি বানানো আছে,এর ভিতরেই মুলত জাপানিজ টেম্পল। ভিতরে প্রাথনা চলছে তাই চুপচাপ এক নজর দেখে চলে এলাম। বের হয়ে বাম দিকে আর একটু উপরের দিকে আরো কয়েকটা টেম্পল আছে ওটাই পেস প্যাগোডা ,ওখানে উঠলাম ঘুরে ঘুরে ছবি তুললাম।উপর থেকে পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড গুলা দেখতে খুব ভালো লাগছিলো। আসল কথা হচ্ছে জাপানিজ টেম্পল এ স্পেসিয়াল কিছু নাই।

মোটামুটি ভালো মানের একটা স্পট। এরকম অনেক বুদ্ধিস্ট টেম্পল আমাদের বান্দারবান, রাঙ্গামাটিতে আছে। যাই হোক নতুন জায়গার নতুন কিছু দেখার মজাই কিন্তু আলাদা।রক গার্ডেনঃজাপানিজ টেম্পল এবং পাশে প্যাগোডা ঘুরা দ্রুত শেষ করে আবার উঠে পড়লাম গাড়ীতে,গাড়ী চলছে,গান চলছে।এবারের ডেসটিনেশন যেখানে আছি এখান থেকে ৩০০০ ফিট নিচে,শুনেই মাথা একটা চক্কর দিলো,বলে কি……।! আমাদের ড্রাইভার মামা সেইরাম গাড়ী চালাচ্ছে। এতো নিচে নামতে লাগলো মনে হলো যেনো গাড়ী না আবার উল্টে যায়।খুব ভয় ও লাগছিলো আবার ভালো ও লাগছিলো। কিছু কিছু জায়গাতো এমন ঢালু ছিলো দেখে সত্যি চমকে উঠতে বাধ্য হলাম। দূর থেকে যখন অনেক দুরের নিচের রাস্তা গুলা দেখলাম শুধু ভাবি কতো নিচে নামতে হবে। প্রায় ৫০-৬০ ডিগ্রী খাড়া নামছে গাড়ী।

হটাত দূরে চোখে পড়লো একটা পাহাড়ের বুকে ছড়ানো ছিটানো পানির ফুয়ারা। ওটাই বুঝি রক গার্ডেন। আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম। পথের মাঝে একটা জায়গা খুব ভালো লাগলো, তাই ড্রাইভার কে বললাম গাড়ী থামাতে। আমরা নেমে অনেকগুলা ছবি তুললাম।চারিদিক এত সুন্দর লাগছিলো যেদিকে তাকাই পাহাড় আর পাহাড় আর কিছুই নাই। অবশেষে আবার গাড়িতে উঠে বসলাম কিছুক্ষণ এর মধ্যেই চলে এলাম রক গার্ডেন। ১০ রুপি করে টিকেট কেটে ভিতরে ডুকলাম। কাছ থেকে রক গার্ডেন কে পেয়ে যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম।ঝরনার প্রথম স্টেপ তাতেই দাড়িয়ে অনেক গুলা ছবি তুলে নিলাম।উপরের দিকে যতটুকু চোখ যায় শুধু যেনো খালি পাথরের পাহাড়ের বুকে ঝরনাই দেখি। আমি জিবনে অনেক ঝরনা দেখেছি এ যেনো অন্যরকম সুন্দর এক ঝরনা।

প্রায় ৬-৭ তা স্টেপ এ ঝরনাটা পাহাড়ের বুক চিরে নিচে নেমে এসেছে। আমরা একদম উপর পর্যন্ত উঠলাম।উপর পর্যন্ত পর্যটকদের উঠার সুবিদারথে রাস্তা বানিয়ে রেখেছেন এবং কিছু ফুলের বাগান ও করেছেন কতৄপক্ষ, সে জন্য তাদের জানাই অনেক ধন্যবাদ। উপরের থেকে যেন চারিপাশ আরো সুন্দর দেখা গেলো।পুরো ঝরনাটা দেখা যায়। ঝর্নার ৩য় স্টেপ এ একটা জায়গায় আপনি নেপালি সেজে ছবি তুলতে পারবেন,এখানে নেপালি সাজার ড্রেস পাওয়া যায় এবং ওরা আপনাকে সাজিয়ে ও দিবে, সম্ভবত ১৫০ কি ২০০ রুপি নেয় আমার ঠিক জানা নাই , কারন আমরা সাজিনি যাই ও নি ওদের কাছে। চাইলে একবার সাজতে পারেন মনে হয় ভালোই লাগবে খারাপ লাগবেনা। প্রায় ১ ঘণ্টার উপরে রক গার্ডেন ঘুরাঘুরি করে অনেক ছবি তুলে নিচে নেমে এলাম।আমার আসতে মন চাইছিলো না।

আমি সত্যি রক গার্ডেন এর প্রেমে পরে গেলাম। যদি একটা দিন অথবা একটা রাত এখানে কাটিয়ে দিতে পারতাম তাহলে বুজি কিছুটা মন তৃপ্ত হতো। যেহেতু হাতে সময় কম তাই একপ্রকার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই নেমে এলাম। এখান থেকে ৩ কিলোমিটার সামনে গেলেই নাকি গঙ্গামায়া পার্ক,হোটেল ম্যানেজার বলেছিলো ওই পার্কের নাকি সংস্কার কাজ চলছে তাই এখন যাওয়া যায় না,তাই আমরা যেতে পারলাম না।জানিনা কথাটা কতোটুকু সত্যি। তবে গঙ্গামায়া নাকি খুবই সুন্দর, রক গার্ডেন এ যে ঝর্নাটা সেটার পানি ই নাকি নিচের দিকে নেমে একটা ঝিরিপথ তৈরি হয়েছে সাথে কিছু বাগান ও আছে। যাইহোক কপালের ফেরে আমরা যেতে পারিনি আপনারা কিন্তু মিস করবেন না।আমি নেক্সট টাইম এই মিস্টেক আর করবনা। নিচে অনেক নামা হলো এবার উপরে উঠার পালা। আবার সেই তিনহাজার ফিট উচ্চতায় উঠতে হবে।আবার ড্রাইভার মামা গিয়ার ধরলো আর রকেটের মত যেন উপরে উঠতে লাগলো।

অবশেষে প্রায় ৩০ মিনিট পর আবার শহরে পৌঁছে গেলাম। চা-বাগানঃ এবারে আমারা যাবো চা-বাগান দেখতে।শহর থেকে খুব একটা দূরে নয়। প্রায় ১৫-২০ মিনিতে পোঁছে গেলাম। একটা চা দকানের সামনে ড্রাইভার গাড়ী রেখে বলল সিক্সটিন নাম্বার স্টল এর মাঝের রাস্তা দিয়ে বাদিকে নিচে নামলেই চা বাগান। আর আমাদের শরীফ সুনলো সিক্সটি নং স্টল।আমরা তখন ৭ নং স্টল এ দাড়িয়ে। সামনে হেটে গেলাম,হটাত দেখি দোকান শেষ। লাস্ট দোকান নং দেখলাম ২২ মনে হয়।এরপর আর দোকান ও নাই নাম্বার ও নাই।আমার তখন বুজতে বাকি রইলোনা ঘাপলা কোথায়। আমরা পিছনে না গিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে বা পাশে একটা ঢালু রাস্তা দিয়ে নেমে পরলাম এই ভেবে যে এখান দিয়ে গেলে হয়তো বাগানে উঠা যাবে।নিচে নামার পর খুব সুন্দর ভিউ পেলাম ছবি তুলার জন্য।পিছনে বিশাল বিশাল পাহাড়, আর পাহাড়ের বুক জুড়ে চা-বাগান।আর একটু সামনে এগিয়ে যেতেই মানুষের শোরগোল সুনলাম বুজলাম এতাই তাহলে চা-বাগান।আমরা উপরে উঠলাম।

মুলত যে চা-বাগান কে স্পট বানানো হয়েছে জায়গাটা খুব এ ছোট। এখানেও আপনি চাইলে নেপালি সেজে ছবি তুলতে পারবেন। অনেকেই দেখি নেপালি সেজে পিঠে চা পাতা তুলার ঝুড়ি নিয়ে ছবি তুলছে। আমরাও কয়েকটা ছবি তুলে রোড এর উপর চলে এলাম। গাড়ী যে দোকানের সামনে থামানো ছিলো সেই দকানে বসলাম।চা এর অর্ডার দিলাম তিনটা, রুবেল বলল সে খাবেনা।তাই আমি আর শরীফ ই খেলাম।রুবেল কে আমি কয়েকবার বলেছিলাম যে নতুন জায়গা একবার খেয়ে টেস্ট করে নাও। ও খেলো না, পরে চা এর স্বাদের কথা শুনে খুব আফসোস করলো। সত্যি বলছি আমার জিবনে অনেক জায়গায় ঘুরেছি,অনেক জায়গার চা খেয়েছি, কিন্তু এইরকম মজার চা এটাই আমার জিবনের প্রথম। এখন ও মুখে লেগে আছে যেনো সেই স্বাদ। তাই যারা যাবেন চা-বাগান ঘুরতে অন্তত রুবেলের মত আফসোস নিয়ে না ফিরে অন্যরকম চায়ের একটা স্বাদ নিয়ে ফিরে আসুন।

আসলে চা-বাগান দেখার তেমন কিছু নাই বা এমন বিশেষ কোন স্পট ও না, তারপর ও আমার মতে চা খাওয়ার জন্য হলেও চা-বাগান ঘুরে আসুন। চাবাগান থেকে ফেরার পথেই পরবে তেঞ্জিং রক নামে একটা স্পট।আমরা ওখানে নামিনি। ওটা হচ্ছে ৫০ রুপির বিনিময়ে ভারচুয়াল একটা পাহাড় দড়ি বেঁয়ে ট্র্যাকিং এর স্বাদ নিতে পারেন। যারা কখোনো পাহাড়ে ট্র্যাকিং করেন নি তারা একবার করে দেখতে পারেন আশা করি খুব ভালো লাগবে। আমরা তেঞ্জিং রক পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম রূপয় মানে ক্যাবল কার এ চড়তে। যেনো আর দেরি সইছেনা আকাশে উড়ার। দার্জিলিং রূপয় বা ক্যাবল কারঃ তেঞ্জিং রক থেকে অল্প একটু সামনেই ক্যাবল কার এর স্পট। এখানে টিকেট নেয় জনপ্রতি ১৫০ রুপি এবং গাড়ী পারকিং চার্জ ২০০ রুপি । সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠে লাইন এ দাঁড়ালাম, মোটামুটি বড়সড় একটা লাইন । প্রায় ৩০ জনের পিছনে ছিলাম। লাইনে দাড়িয়ে আশেপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকলাম।

ক্যাবল কার এর ছবি তুললাম। প্রথমে দেখে মনেই হয়নি ক্যাবল কারটা এতো দূর পর্যন্ত যায়। চোখ যতোতুকু যায় তার চেয়ে অনেক নিচে নামে এই কার। মোট ৭ টা কার আসে রানিং এ, একটাতে ৬ জন করে বসে। প্রায় ৩৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর আসলো আমাদের পালা।আমরা ছিলাম তিনজন আর পিছনে ছিলো এক কাপল আংকেল এবং আন্টি । সিঙ্গেল কেউ ছিলোনা বিধায় আমরা ৫ জন ই গেলাম একটা কার এ করে। উনারা এসেছিলেন দিল্লি থেকে। শরীফ খুব ভাব জমিয়ে ফেললো উনাদের সাথে।আমি এর আগে ক্যাবল কারে উঠেছিলাম আমাদের বান্দারবান এর মেঘলাতে এবং ঢাকার নন্দন পার্কে। কিন্তু সেগুলা এতো বড় ছিলোনা ,মানে এত লম্বা ক্যাবল কার ছিলোনা। ওপারে যেতে সময় লাগলো প্রায় ১৫ মিনিট।কার থেকে পুরো আশপাশ খুব সুন্দর দেখা যায়।

নিচের পাহাড়ি রাস্তা গুলা সুতার মতো দেখা যায়।মনে হচ্ছে যেনো সব নিচে ফেলে আকাশে উঠে গেছি।আমরা ভিডিও করলাম,ছবি তুললাম। আমাদের সাথের কাপলের ও ছবি উঠিয়ে দিলাম কয়েকটা। উনারাও খুব ভালো মনের মানুষ,খুব ই মিশুক টাইপের। অল্প সময়ে উনাদের সাথে অনেক কথা হলো।প্রায় ১৫ মিনিট পর যেয়ে দেখি যেখান থেকে কার ঘুরে আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে ওখানে সবাইকে নামিয়ে দিচ্ছে।আমি ভাবলাম এখান থেকে বুঝি হেটে যেতে হবে।আমার ভুল ধারনা ভাঙতে সময় লাগলনা।ডান দিকে তাকিয়ে দেখি কি অপরূপ সুন্দর ভিউ।পাহারের একদম পাড়ে পিছনে বিশাল বিশাল পাহাড়।তাই কতৃপক্ষ এখানে একটু বিশ্রামের ব্যবস্থা করেছেন, উপরে একটা খাবারের দোকান ও আছে। মানে আমাদের দীর্ঘ ক্যাবল কার ভ্রমন এর যাত্রা বিরতি এটা। আমরা নেমে ছবি তুললাম। জায়গাটা দেখতে আমার কাছে খুবই ভালো লাগছিলো।

তবে তখন রোদের তাপ ও ছিলো বেস ক্ষিপ্ত। ৫ মিনিট পর আবার উঠে পরলাম ক্যাবল কার এ। আবার সেই মন জুরানো দৃশ্যগুলা দেখতে দেখতে ফিরে এলাম।উপর থেকে নিচের জায়গা গুলা দেখলে মনে হয় যেনো প্লেন থেকে দেখছি।যাওয়ার পথে আবার শুনলাম ঝর্নার ডাক।ভাবলাম মনে মনে প্লেনে বসেও ঝরনা দেখার স্বাদ নিয়ে নিলাম।যাই হোকনা কেনো সব মিলিয়ে ক্যাবল কার ভ্রমনটা বেশ ভালো লেগেছে। মনে হচ্ছে এটা যদি মিস করতাম তাহলে দার্জিলিং ভ্রমন এ যেন একটা অপূর্ণতা থেকে যেতো।তই যারা দারজিলিং ভ্রমন এ আসবেন ভয় না পয়ে একটু সাহস নিয়ে উঠে পড়ুন গ্যারান্টি দিয়ে বলছি খুব ভালো লাগবে।হিমালয় ইন্সটিটিউট, মিউজিয়াম এবং চিড়িয়াখানাঃক্যাবল কার ঘুরা শেষে আবার গাড়িচেপে বসলাম,একটু সামনে যেতেই আবার নেমে পড়লাম।

কারন আমাদের পরবর্তী ডেসটিনেশন হিমালয় মিউজিয়াম এবং চিড়িয়াখানা। দুইটাই পাশাপাশি, মুল রোড থেকে কিছুটা পাহাড়ের উপর। হেটে উপরে উঠলাম, গেইট এ দেখি সেইরাম ভিড়। কোন এক প্রতিষ্ঠান থেকে যেনো ৪৭ জন এসেছে ওরা ডুকছে তাই অনেক ভিড় ছিল। আমরা তিনজন ৪০ রুপি করে ১২০ রুপির টিকেট কেটে ভিতরে ডুকলাম। প্রথমেই ডুকে দেখি ভাল্লুক মামা বসে বসে কি যেনো খাচ্ছে সবাই পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে। আমরা গেইট এ প্রবেশ করার পর সোজা পাহাড়ের উপরে উঠে গেছে যে রাস্তাটা ,ওটা ধরে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলাম।পাকা রাস্তা তার বাম পাশে পাহড়ের ঢালুতে প্রাণীগুলা রেখেছে। মানে রাস্তায় দাড়িয়েই নিচের প্রানি গুলা দেখা যায়।

মনে পরে গেলো সেই ছোট বেলার কথা, বাবা মায়ের সাথে সেই কত ছোট থাকতে গিয়েছিলাম চিড়িয়াখানায়। তবে আমার কাছে পাহাড়ি এই জু টা অনেক ভালো লাগছে। চিড়িয়াখানাটা খূব একটা বড় ণা হলেও বেশ ভালই সাজিয়েছে তারা। রাস্তাটা উপরে উঠে ডানদিকে পাহাড়ের উপর দিয়ে মেইন গেইটের আগে আবার নিচে নেমে গেছে।আর এই মোড় এর সামনেই মিউজিয়াম এর গেট ।আমরা মিউজিয়াম এ ঢুকে গেলাম। ভিতরে ছবি তুলা নিষেধ। একজন মাউন্ট এভারেস্ট ট্রাকার কিভাবে যাবে, কোথায় কীভাবে পাড় হবে, কি কি আনুসাঙ্গিক জিনিপত্র সাথে নিতে হবে সব কিছুর একটা ভারচুয়াল ট্রেনিং যেন করলাম মিউজিয়াম ঘুরে মনে হলো। মিউজিয়ামটা খুব সাজানো গুছানো। একজন এভেরস্ট ট্রাকার কিভাবে ট্র্যাকিং করবে একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু বুজানো হয়েছে পার্ট বাই পার্ট।

মিউজিয়াম ঘুরেতো আমার মথায় যেনো ভুতচেপে বসলো আমিও যাবো এভারেস্ট ট্র্যাকিং এ। সত্যি খুব খুব বেশি ইচ্ছা হচ্ছিলো তখন এবং মনে মনে ডিসিশন নিয়ে নিলাম, আমিও যাবো একদিন। আপনি দার্জিলিং আসলে অবশ্যই এই মিউজিয়াম ঘুরবেন। আমি ১০০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আপনি বই পরেও এমন নলেজ পাবেন না হিমালয় এবং ট্র্যাকিং সম্পকে যতোটা পাবেন এই মিউজিয়াম ঘুরে। যারা পাহাড় ট্র্যাকিং ভালোবাসেন নিঃসন্দেহে তাদের জন্য ছোটখাটো একটা ট্রেনিং হয়ে যাবে। মিউজিয়াম থেকে বেরিয়ে উপরের রাস্তা ধরে আবার হাটতে লাগলাম আর আশেপাশের প্রানি গুলা দেখতে লাগলাম। হটাত দেখি মামা এসে হাজির। আরে চিনলেন না………..? আমাদের রয়েল বেঙল টাইগার মামা। একদম খাঁচার সামনে এসে বসে পড়লো যেনো আমাদের সাথে দেখা করতে আসলো।

সুয়ে সুয়ে কতক্ষণ পায়চারী করে আবার উপরে একট টিলায় উঠে গেলো। এভাবে আরো অনেক প্রানি দেখতে দেখতে প্রায় ৫ টা বেজে গেলো।দুপুরে খাওয়া দাওয়া ও হয়নি ঘুরার তালে ভুলেই গেছিলাম। জু থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেলাম হোটেলে।গোসল করে ফ্রেশ হয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম রাতের শহর দেখতে। আশেপাশের মার্কেট গুলা ঘুরে দেখলাম। কেনাকাটার বিশেষ কিছু দার্জিলিং এ নাই।তবে আপনি চাইলে বিগবাজারটা ঘুরে দেখতে পারেন। তবে রোডের পাশের দোকানগুলা থেকে জিনিপত্র কিনতে গেলে একটু সচেতটা অবলম্বন করুন। যে জিনিস কিনেছেন তা ঠিক থাক দিলো কিনা,দাম ঠিক রাখলো কিনা, অবশ্যই দামাদামি করে নিবেন।আর আমার মতে দার্জিলিং থেকে তেমন বেশি মার্কেটিং না করাই ভালো।

রাত ৮ টায় গেলাম খাবারের হোটেলে, সারাদিনের না খাওয়া তাই একটু আগে ভাগেই চলে গেলাম।খেয়ে দেয়ে ৯টার মধ্যে রুমে চলে আসলাম।খুব তারাতারি ঘুমাতে হবে,কারন কাল ভোরে যাব টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখতে, অতএব কারনে সুর্যমামা উঠার আগেই ওখানে হাজির থাকতে হবে,বুঝতেই পারছেন তাহলে কয়টায় ঘুম থেকে উঠতে হবে। মনে রাখবেন টাইগার হিলে সূর্যোদয় দেখতে যেতে হলে আপনাকে আগের দিন গাড়ী ঠিক করে রাখতে হবে,খুব তাড়াতাড়ি গুমাতে হবে এবং সুর্যমামা উঠার মিনিমাম ১ ঘণ্টা আগে আপনাকে রওয়ানা হতে হবে। আমাদের তো গড়ী ঠিক করাই ছিলো তাই নির্ভয়ে জলদি জলদি ঘুমিয়ে গেলাম।মোবাইল এ ৩.৩০ এর এলারম দিয়ে রাখলাম।এ ছড়াও হোটেল বয় এবং ড্রাইভার কে বলা ছিলো ৪টার দিকে যেনো ডেকে দেয়।টাগারহিলে সুর্যোদয় ও কাঞ্চনজঞ্জা দর্শনঃওদের ডাকের আগেই আমার ঘুম ভেঙে গেলো,আমি শরিফ আর রুবেল কে জাগিয়ে দিলাম।

আমরা রেডি হচ্ছি তখন হোটেল বয় এসে ডাকল। আমরা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। মোটামুটি বেশ ভালোই ঠাণ্ডা লাগছে তাই জ্যাকেটটা পরে নিলাম।চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লাম,খুব শিত লাগছে। গাড়ী চলছে পাহাড়ের উপরে উঠছেই শুধু।বেশিক্ষন লাগলোনা আমাদের পোঁছাতে।গিয়ে মনে হলো আমরা বুজি সবার শেষে এলাম। অনেক মানুষ আর অনেক গাড়িতে ভরা পুরা টাইগার হিল। একটি পরিষ্কার দিনে আপনি এমনকি এখান থেকে মাউন্ট এভারেস্ট দেখতে পারেন. টাইগার হিল দার্জিলিং টাউন থেকে ১১ km দূরে অবস্থিত এবং গাড়ী পৌঁছাতে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগে। মূল টাইগার হিল কোন একটা কারনে বন্ধ আছে,তাই আমরা বাম দিকের উঁচু একটা পাহাড়ে দাঁড়ালাম। তখন কিছুটা আলোর দেখা পাচ্ছি , সাথে আপছা আপছা যেনো কাঞ্চনজঞ্জা ও দেখা যাচ্ছে। আমি মনে মনে খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম।

আশেপাশে অনেক মানুষ, অনন্যা দিনেরচেয়ে নাকি আজ মানুষের চাপ বেশি।কারন খুজে জানতে পারলাম গতকাল যারা এসেছিলো তরা বৃষ্টির কারনে কিছুই দেখতে পারেনি,তাই তারা আজ আবার এসেছে এ কারনেই মানুষের চপটা একটু বেসি।তখন মনে মনে খুব খুশি হলাম এবং শুকরিয়া করলাম আল্লাহ তায়ালার কাছে, গতকাল না এসে কি ভালোই না করেছি। অধির আগ্রহ নিয়ে দাড়িয়ে আছি কখন সূর্য মামা দেখা দিবে, ওদিকে আজ কাঞ্চনজঞ্জা এতো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বলে কিছুতই বুজাতে পারবনা।আমার বিশ্বাস ই হচ্ছেনা আমি কি সত্যি দেখছি না ঘুমের ঘোরে সপ্ন দেখছি? এই কাঞ্চনজঞ্জা নাকি রবি ঠাকুর ১৪ বার এসেও দেখতে পা্রেনি,আবার আমার পাশে এক ভদ্র লোক বলতেসে উনার পরিচিতো এক লোক নাকি গরিয়াহাট থেকে ৮ বার এসেও একবার ও দেখতে পাননি এই কাঞ্চনজঞ্জা, অথচ আমরা এইবার ই ১ম বার এবং প্রথমবার এই দেখা মিললো কাঞ্চনজঞ্জার।

সত্যি আমরা খুব ভাগ্যবান, ভাগ্যবান না হলেকি এতো সহজে এই জিনিষ দেখতে পেতাম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু অপলক চোখে তাকিয়ে দেখে যাচ্ছি সপ্নের কাঞ্ছনজঞ্জা। একটু পর সুরজমামার সোনালী বর্ণ এসে পড়লো কাঞ্ছনজঞ্জার চুড়ায়, বিশ্বাস করবেন না তখন যেন মনে হলো স্বর্ণের পাহাড় দেখছি আমি। খুব লোভ হলো ইস একবার আমিও যদি এভারেস্ট জয় করতে পারতাম……!!!!। এখানে দাঁড়িয়ে ১০ রুপিতে কফি খতে কিন্তু ভুল করবেননা।পাহাড়ের নিচ থেকে সুরজমামা ধীরেধীরে জেগে উঠতে লাগলো।মামা যতোই জাগছে প্রকৃ্তির রুপ যেনো তত বারছে।আপনি নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস ই করতে পারবেননা টাইগার হিলের সূর্যোদয়ের সময়কার সেই আকাশের রুপ,পাহাড়ের রুপ,প্রকিতির রুপ। প্রায় ১ ঘণ্টার মত এখানে সময় কাটিয়ে নিচে নেমে এলাম।

আমার মন চাইছিলো না আস্তে,তবুও আসতে হলো, আর মনে মনে বলে আসলাম আমি আবার আসিবো দেখিতে তোমার এই অপরুপ সৌন্দর্য দেখিতে।বাতাসিয়া লুপঃ আবার গাড়ী চেপে বসলাম, গাড়ী চলছে এবার যাওয়ার পথে পরবে আমাদের শেষ স্পট বাতাসিয়া লুপ।আরো একটা স্পট ছিলো আমাদের লিস্টে ঘুম মনেস্ট্রি কিন্তু আমরা যাইনি। কিছুক্ষন পর ই চলে এলাম বাতাসিয়া লুপ।টিকেট কেটে ভিতরে ডুকলাম, এখান থেকেও আপনি কাঞ্ছনজঞ্জা দর্শন করতে পারবেন,এখানে ফুলের বাগান দিয়ে জায়গাটা সাজানো আছে,খুব ই সুন্দর। দুরবিন এর ব্যবস্থা আছে,দুরবিন দিয়ে আপনি কাঞ্ছনজঞ্জা,নেপাল বর্ডার, চায়না বর্ডার,ভারত বর্ডার,আরো অনেক পয়েন্ট গুলা দেখতে পারেন।আমি দেখেছিলাম ৩০ রুপি করে নেয় ওরা আমার কাছে ভালো লেগেছে খুব। যেতে না পারি মাউন্ট এভারেস্ট এ দেখতে তো পেলাম।আবার আপনি চাইলে এখানে নেপালী সাজেও সাজতে পারবেন।

আবার এখানেই দার্জিলিং টয় ট্রেন ৩৬০ ডিগ্রীতে নাকি ঘুরে।সবকিছু মিলিয়ে বাতাসিয়া লুপ স্পট টা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।আসলে এমন একটা স্পট ও পেলাম না যেটা খারাপ লাগার মত।নতুন জায়গায় গেলে মনে রাখবেন সবকিছুই ঘুরে দেখতে হয় অভিজ্ঞতার জন্য।কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে বের হয়ে নাস্তা করলাম ডিম রুটি। গাড়িতে উঠলাম চলে এলাম দার্জিলিং শহরে।এই ছিলো মোটামুটি আমাদের দার্জিলিং সাইট সিয়িং এছাড়াও কিছু স্পট আছে দার্জিলিং এ যেগুলা ঘুরে দেখতে পারেন। দার্জিলিং টয় ট্রেন এ উঠে পুরো দার্জিলিং শহর ঘুরতে পারবেন।তবে আগেই টিকেট কেটে রাখবেন,কারন টিকেট না পেলে আপনি অনেক বড় একটা আনন্দ থেকে বঞ্ছিত হবেন। আবার আপনি দার্জিলিং মেইল চুড়ায় উঠে বিকেলের অবসর টাইম কাটাতে পারেন আশেপাশের প্রকৃতি দেখতে দেখতে।মেইল চুড়া হচ্ছে দার্জিলিং এর সবচেয়ে উঁচু একটা জায়গা। আপনি চাইলে একদিনে কলিংপং ঘুরে আসতে পারেন,ওখানে কয়েকটা স্পট আছে ঘুরে দেখার মত,দার্জিলিং শহর থেকে প্রায় ৫০ কি.মি. দূরে।

চাইলে আপনি রিজার্ভ কার নিয়ে যেতে পারেন সেই ক্ষেএে ভাড়া পরবে ২০০০-২৫০০ রুপির মত। অথবা আপনি লোকাল জীপ এ করে ও যেতে পারেন ২০০ রুপি জনপ্রতি ভাড়া। এছাড়াও আপনি মিরিক লেকে ঘুরতে যেতে পারেন , মিরিক দার্জিলিং থেকে বেশ দূরে প্রায় ৭০-৭২ কি.মি.। গাড়ী রিসার্ভ অথবা লোকাল জিপে যেতে পারবেন।অনেকদিন হয়ে এলো নিজ বাড়ি, ঘর,দেশ ছেড়ে অনেক দূরে আছি। বাড়ি যাওয়ার জন্য যেনো মনটা এবার ছটফট শুরু করে দিলো। যেহেতু আমাদের সাইট সিয়িং সকাল ৯ টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেলো তাই আমরা আজ অধেক বেলা রেস্ট নিলাম।বিকালে কিছু কেনাকাটা করলাম।রাতে সব গুজগাজ করলাম। কারন সকাল ৮ টার মধ্যেই আমরা আবার শিলিগুড়ি ব্যাক করবো,ওখান থেকে আবার শ্যমলি করে ঢাকা। একটা কথা বলে রাখি আপনি যতটুকু সম্ভব শ্যামলী পরিবহন এ আসা এবং যাওয়ার চেস্টা করবেন।কারন বর্ডার এর সব কিছু ওরাই করে দেয় এবং কোন ঝামেলা হলেও ওদের সাহায্য পাবেন।

আমরা দু দিন আগেই ফোন করে ১৭ তারিখের টিকেট কনফার্ম করে রেখেছিলাম।আপনারাও যারা আসবেন আসার সময় শ্যামলীর শিলিগুড়ি কাউন্টার এর নাম্বার নিয়া আসবেন,যাওয়ার তারিখ সিউর যানা থাকলে শিলিগুড়ি নেমেই রিটার্ন টিকেট কেটে ফেলবেন অথবা যাওয়ার আগে ফোনে বুক দিয়ে রাখবেন। শিলিগুড়ি থেকে বাস ছাড়ে দুপুর ১.৩০ মিনিট এ।তাই আমরা সকাল ৮টায় দার্জিলিং থেকে রওনা দিলাম।দার্জিলিং টু শিলিগুড়িঃ কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে ছুটে চলছে আমাদের জীপ, আমরা তিনজন মাঝের সিটে বসলাম,এটা ৪ জনের সিট। আমরা একটু আরাম করে যাওয়ার জন্য একটা সিট বেশি নিয়া নিলাম।হটাত দেখি চোখের সামনে কাঞ্ছনজঞ্জা।ঘুরে ঘুরে একটু পর পর আসে আর যায়।আসলে কাঞ্ছনজঞ্জা ঘুরে না ঘুরছে আমাদের গাড়ি,পাহাড়ের এই বাঁক ঘুরে তো কাঞ্ছনজঞ্জা চোখের সামনে ভেসে উঠে আবার ওই বাঁক ঘুরে তো কাঞ্ছনজঞ্জা হারিয়ে যায়।

আজও আকাশ খুব পরিষ্কার তাই আজও কাঞ্ছনজঞ্জা খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।আমার চোখ ঘুমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো,কিন্তু কাঞ্ছনজঞ্জা দেখে যেনো ঘুম পালিয়ে গেলো।অনেক্ষন পর্যন্ত দেখতে থাকলাম কাঞ্ছনজঞ্জার শেষ বিদায়।একটু পর দেখি হটাত রাস্তার কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। আরে না রাত হয়ে যায়নি যে দেখা যাচ্ছে না।আসলে মেঘ গুলা এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে এমন ভাবে ছুটে যাচ্ছিলো যার কারনে কিছুই দেখা যাছিলো না।মানে আমরা মেঘের মাঝে ডুকে গেলাম, পাহাড়ি মেঘ ভেদ করে ছুটে চলছিলো আমাদের জীপ।আবার ও মুগ্ধ হলাম ড্রাইভার এর দক্ষতায়। এখন মনে হচ্ছে উপরে উঠা যতো কঠিন ছিলো নিচে নামা বোধহয় আরো কঠিন। ধিরে ধিরে যেনো পাহাড়ি প্রকিতি আমাদের বিদায় যানাচ্ছে।

আমরা চলে এলাম আবার সেই কোলাহোলে। প্রায় ৩ ঘন্টা পর এসে পোঁছালাম শিলিগুড়ি শ্যমলি কাউন্টারের সামনে নামলাম তখন বাজে প্রায় ১২ টা। যারা চকলেট কিনবেন তারা শ্যামলী কাউন্টার এর পাশে একটা বড় দোকান আছে, একজন মুরুব্বি টাইপের লোক বসে,উনার কাছ থেকে চকলেট কিনতে পারেন, ৫% ডিস্কাউন্ট পাবেন। আমরা ওই দোকান থেকে কিছু চকলেট কিনলাম। ১.৪৫ এ গাড়ী ছাড়ল। প্রায় ২.৫ ঘণ্টা পর পৌঁছে গেলাম বর্ডার এ। গাড়িতে থাকতেই সুপারভাইজার সাহেব আবার পাসপোর্ট নিয়া গেলো। ভারতীয় ইমিগ্রাশন এক্সিটঃ বাস থেকে নেমে গেলাম শ্যামলীর টাকা এক্সচেঞ্জ এর কাউন্টার এ। এখান থেকে আপনি অবশিষ্ট রুপি গুলা টাকা করে নিবেন।তারপর আবার চলে যাবেন যাওয়ার সময় যে যে জায়গায় যেতে হয়েছিলো সে সে জায়গায়। পাসপোর্ট নিয়া গেলাম ইমিগ্রাশন অফিস এ। একটা ফর্ম এ আবার সব ইনফরমেসন লিখলো, আমাদের জিজ্ঞাসা করলো কোন হোটেল এ ছিলাম।

আমরা হোটেল এর নাম বললাম,উনারা ফর্ম এ লিখে দিলো। আপনি দার্জিলিং যে হোটেল এ থাকবনে সে হোটেলের নাম মনে রাখবেন।তারপর আবার ছবি তুলার লাইন এ দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম।সব শেষে ওদের বড়বাবু একটা সাইন আর সিল মেরে পাসপোর্ট দিয়ে বলল যাও। শ্যমলি কাউন্টারের একজন আমাদের তিনজনের পাসপোর্ট নিয়া একদম বর্ডার এর কাছে আসলো। ওখানে সব ব্যাগ গুলা রাখা।আমাদের জিজ্ঞাসা করলো তোমাদের ব্যাগ কোনগুলা? আমরা দেখিয়ে দিলাম।আমদের মোট ৭ টা ব্যাগ ছিলো। একজন ভারতীয় পুলিশ ব্যাগ একটা খুলে চেক করতে লাগলো।পুরো চেক না করেই বলল কি চেক করবো কথা বলো ওদের তো ব্যাগ বেশি। শ্যমলির যে লোক ছিলো সে পাশের খালি একটা রুমে ডেকে নিয়া বলল, দেখো এতো ব্যাগ খামাখা খুলে কি লাভ? তোমরা তিজনে ১৫০০ টাকা (ঘুষ) দাও ব্যাগ চেক করার দরকার নাই। আমরা ৯০০ টাকা(ঘুস)দিলাম, পরে ছেড়ে দিলো।ধান্দাবাজি সব জায়গায় ই চলে।আপনি বৈধ আর অবৈধ যে মালামাল ই আনুন মনে রাখবেন বর্ডারে আপনাকে টাকা দিতেই হবে।

বাংলাদেশী ইমিগ্রাশন এক্সিটঃ চলে এলাম নিজের দেশে।দাড়িয়ে থাকা পুলিশ কে পাসপোর্ট দেখিয়ে ডুকলাম বাংলাদেশী ইমিগ্রাশন অফিসে। পাসপোর্ট দিলাম,বেগ দেখালাম যে এইগুলা আমাদের।দেখে বলল ও আচ্ছা শপিং করছেন তাইনা?আমি বললাম হা, ঠিক আছে ব্যাগ খুলার দরকার নাই তিনজনে ৩০০ টাকা (ঘুষ) দেন। আমি সাথে সাথে ৩০০ টাকা(ঘুষ) দিয়ে দিলাম। পাসপোর্ট এ সিল মেরে বলল চলে যান।অবশেষে আবার বিডিয়ার চেকপোস্ট সে আবার ব্যাগ খুলে চেক করতে লাগলো, আমি মনে মনে বললাম হায় আল্লাহ আর কতো ঘুষ দিতে হবে? সে বলে উঠলো এতো কিছু নেওয়া যাবেনা, ৫ টার বেশি কোন প্রোডাক্ট নেওয়া বৈধ না,মানে নানা বাহানা শুরু করলো। অবশেষে এখানে উনাকে দিলাম ২০০ টাকা ঘুষ ব্যাস আমার সব বৈধ হয়ে গেলো। ভ্যানে করে চলে এলাম শ্যামলী কাউন্টার এ।

যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম, দেখি শ্যমলির ঢাকার গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে।আসার দিন যে গাড়ী, ড্রাইভার, সুপারভাইজার ছিলো যাওয়ার দিন ও দেখি তারাই। ব্যাগ গুলা সব বক্স এ দিয়া দিলাম। বাস ছারবে সব যাত্রী এবং পাসপোর্ট আসলে। আমরা একটু ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিলাম।অবশেসে ৭ টার দিকে বাস ছাড়ল। সকাল ৪ টায় ফকিরাপুল নামলাম। আমি কখনো ট্র্যাভেল নিয়া কোনো লেখা লিখিনি, এটাই আমার প্রথম লেখা। আর এই লেখাটার জন্য অনেকের অনুরুধ ও ছিলো যার কারনে লিখতে হলো। আমার লেখায় কোন ভুল থাকলে, বা কোন ভুল তথ্য থাকলে দয়া করে জানাবেন। আর আমার এই লেখার মাধ্যমে যদি একজন মানুষেরও একটা ছোট উপকার হয় তবেই আমি সার্থক। কষ্ট করে পড়ার জন্য, সময় দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। বেশি বেশি ঘুরে বেড়ান, জীবনের সতেজতা বাড়ান।সবাই ভালো থাকবেন এই কামনাই করি।

লেখকঃ মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হাসান

বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি সাপেক্ষে প্রকাশ করা হলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here