শেষ সীমানায় একটি রাত, সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জ হাওর,বারিক্কা টিলা,যাদুকাটা নদী ভ্রমন

0

গত চার পাচ দিন ধরেই সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। সুরমা নদীর পানিতে শহরের কিছু কিছু জায়গা নাকি তলিয়েও গিয়েছে। কিন্তু আমি আর শ্রাবন যে টিকেট কেটে ফেলেছি কি আর করবো। বৃহস্পতিবার সকালে দ্বীপের ফোন, ভাই পাড়লে টিকেট ক্যান্সেল করেন। মনে মনে চিন্তা করলাম যা আছে কপালে এবার বৃষ্টিতেই ক্যাম্প করবো।

কিছুক্ষন পর দীপকে ফোন দিলাম, টিকেট তো রিটার্ন নিবেনা তাই আমরা আসছি। কিন্তু আসলে আমি কাউন্টারেই যাইনি। কারন যাবো মানে যাবোই, ইচ্ছাটা ছিল এরকম। রাত ১১:২০ এ গাড়ি। ফ্লাইওভারের উপড় শ্রাবনের বাস নষ্ট হওয়াতে আসতে ওর কিছুটা লেট হলো। আমার দোকানে বসেই ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। রাতের খাবার চিটাগাংরোড থেকে খেয়ে নিলাম। শ্যামলী বাস আসলো ১২ টায়। সকাল ৬ টায় সুনামগঞ্জ পৌছে দ্বীপ কে ফোন করতেই বাসস্ট্যান্ড এ চলে এলো।সুনামগঞ্জ ঢুকার পথে বাসে বসে চোখের সীমানায় শুধু পানি আর পানি দেখে মনে মনে একবার চিন্তা করলাম আসলে পাগলামি টা কি ঠিক হচ্ছে?

একটা রিক্সা করে পাভেল ভাইয়ের বাসায় চলে গেলাম। গিয়ে দেখি সাপ্তাহিক ছুটিতে পাওয়েল ভাই ও বাসায় আছে। এই পরিবার টার কথা আর কি বলবো, মানুষ এতটা অমায়িক আর কাছের হতে পারে সেইটা বুঝাতে গেলে তাদের জন্য আলাদা টপিক্স করে গল্প লিখতে হবে। সকালে যাওয়ার পরই খেলাম পিঠা, বিস্কুট, চা। তার কিছুক্ষন পর ডিম ও খিচুড়ি। প্রায় ১২ টা পর্যন্ত রেস্ট করে আমি শ্রাবন আর দ্বীপ বেড়িয়ে পড়লাম বারিক্কার টিলার উদ্দেশ্যে। এর মাঝে বৃষ্টি যেন পালিয়ে গিয়ে সূর্য মামা আমাদের স্বাগত জানালো। পাওয়েল ভাইয়ের ক্লাশ আছে আর পাভেল ভাই বিকেলে আসবেন বলেছিলেন। যদিও পড়ে বিশেষ কাজের কারনে উনাকে অনেক মিস করলাম।

সুরমা নদীর উপড় করা নতুন ব্রীজ টি পাড় হয়ে দুইটা মোটর সাইকেল ভাড়া করলাম ৬০০ টাকা দিয়ে লাউড়েরগড় পর্যন্ত। এক বাইকে শ্রাবন, আর গত দিন পনেরো আগে সাইকেল একসিডেন্ট এর কারনে আমার ডান হাতটি এক প্রকার অচলের মত বিধায় ব্যাগটি নিয়ে অন্য বাইকে দ্বীপ আমার পিছনে বসলো। রাস্তার অনেকটা অংশই ভাঙ্গাচুড়া যা মোটর সাইকেল এর কারনে অনুভব মোটামুটি কম হয়েছে।পলাশ বাজার পাড় হয়ে একটু সামনেই ছুটে চলতেই গত দিনের সব ক্লান্তি নিমেষেই ঝড়ে গেলো।

দূর থেকে বুঝা যাচ্ছে ভারতের মেঘালয়ের বিশাল বিশাল পর্বতমালার রুপ। পাহাড়ের ভাজে ভাজে লুকোচুরি খেলে যাচ্ছে মেঘ আর দুই পাশে বিশাল হাওরের মাঝে ছুটে চলছি আমরা। হাওর দেখতে এত সুন্দর হয় আগে জানা ছিলোনা। মনে চাইছিল এই হাওরেই কোন এক নির্জন ছোট দীপের মত জেগে থাকা উচু টিলায় এক রাত ক্যাম্প করে যাই। চারিদিকে পানি আর পানি তার মাঝে দুপাশে গাছের সারি,পড়ছে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। গাছের পাতাগুলো এতটাই সবুজের ঝলকানি চোখে যেন ধাধা লেগে যাচ্ছিল। কয়েক জায়গায় নেমে আমরা ছবি ও উঠালাম।তারপর লাউড়েরগর বাজারে নেমে শাহদুরের দোকানে মিষ্টি দিয়েই দুপুরের লাঞ্চ সারলাম।




এখানেই যাদুকাটা নদী পাড় হওয়ার ঘাট। বর্ষার কারনে নদী অনেক বিশাল আকার ধারন করেছে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই ওপার থেকে নৌকা এলো। আমরা উঠে পড়লাম, নৌকা একটু সামনে যেয়ে বাগ নিতেই মন উতলা হয়ে উঠলো বিশালাকৃতির সেই শারপিন ঝরনা দেখে, যদিও তা ভারতের ই সম্পদ।যাদুকাটা এমন একটা নদী যার নামের সার্থকতা তার আপন রুপেই বিদ্যমান। এক পাশে তাহিরপুর এর বড়ছড়া এলাকা অন্য দিকে লাউড়েরগর। আরেকদিকে বারিক্কার টিলা তার বিপরীত পাশে আছে মেঘালয়ের বিশাল পাহাড় আর সেই পাহাড়ের গায়ে অসংখ্য নাম না জানা ঝর্ণা। পাহাড়ের থেকে ঝর্নার পানির স্রোত বয়ে যেন নিজের রুপ কে আরো রাঙিয়ে নিয়েছে এই যাদুকাটা নদী। খুব ইচ্ছা ছিল এই মায়াময় নদী দেখার আজ তা পুরন হলো। দেখতে কিছুটা বিছনাকান্দির সাথে মিল আছে এই জায়গার দৃশ্য। দুই পাশেই বিশাল উচু পাহাড় মাঝে বয়ে চলেছে যাদুকাটা নদী।

প্রায় ১০ মিনিটের মত নদী পাড়ি দিয়ে উঠে পড়লাম খাড়া পথ ধরে বারিক্কার টিলার উপর। টিলার উপড়ের দৃশ্য এতটাই মনোমুগ্ধকর যা লিখে বুঝানোর ভাষা নেই আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে। একটু সামনে হেটে যেতেই পেয়ে গেলাম সিমানা খুটি ও কাটা তারের বেড়া। কাটা তারের বেড়ার ৫০/৬০ গজ আগে নদীর ধারে এমন সুন্দর একটি জায়গা পেলাম যেখানে ক্যাম্প করার জন্য তাবু পিচ করার ইচ্ছা হলো। সরাসরি সামনের দিকে বিএসএফ এর ক্যাম্প আর নদীর ওপারে বিজিবি ক্যাম্প। পিছন দিকে কাটা তারের বেড়া আর চোখ বরাবর আছে বিশাল বিশাল পাহাড় ও ঝর্না। শারপিন ঝর্ণা যেন হাত বাড়লেই ছুয়ে ফেলতে পারবো। আশেপাশে নাই কোন মানুষের বসত বাড়ি। যেহেতু জায়গাটি সীমানার খুব কাছে তাই বিজিবির অনুমতি নেওয়ার জন্য নীমানা ধরে সারা টিলা ঘুরে ফেললাম কিন্তু তাদের দেখা পেলাম না।

যাদুকাটা নদীর মায়া, সুনামগঞ্জ

এমন জায়গায় ক্যাম্প করে থাকা একজন ট্রাভেলারের স্বপনই বলা যায়।যা আছে কপালে সিদ্ধান্ত নিলাম এখানেই ক্যাম্প করবো। যদি বিজিবি এসে উঠিয়ে দেয় তখন না হয় লোকালয়ে চলে যাবো। কিন্তু স্থানীয় লোকজন ই যেন তখন আমাদের কাছে বিজিবি রুপে হাজীর হলেন। আপনারা কি পাগল হয়ে গেছেন এখানে থাকবেন? চুরি ডাকাতির ভয় আছে, তাছাড়া বিজিবি রাতে পাহাড়া দেয়। যদি বি এস এফ এসেও নিয়ে যায় কে রক্ষা করবে আপনাদের। এমন নানা কথায় আমাদের সবল হৃদয় দুর্বল করার অপপ্রয়াস চালালো তারা। আর আমরাও নাছোড়বান্দা এত ঝড় বাদল উপেক্ষা করে যখন ঠিকানা মত পৌছেছি ক্যাম্প এখানে না করে আর ছাড়ছিনা। তাবু পিচ করে ফেললাম, আর লোকজনের ভিড় জমে গেলো আমাদের দেখার জন্য।

সবাই মনে মনে পাগল ছাড়া কিছু ভাবেনি সেটা ১০০% নির্ভুল। সকালে তাবুর জানালা দিয়েই ভোরের সূর্য উকি দিয়ে ঘুম ভাঙাবে। চোখ মেলে দরজা খুলেই দেখবো বিশাল পাহাড়ের উপড় মেঘমালার খেলা আর ঝর্নার অবিরাম বয়ে চলা। ভ্রমন পাগলদের কাছে এর চেয়ে আর ভালো জায়গা কি হতে পারে? কি করে যাই এই জায়গা ছেড়ে লোকালয়ে?তাবু পিচ শেষে শ্রাবন আর দ্বীপ কে পাঠালাম টিলার উপড়ের দোকানে খোজ নিতে রান্নার ব্যাবস্থা অথবা লাকড়ির কোন ব্যাবস্থা আছে কিনা।এই ফাকে আমি বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের নিভু নিভু আলোয় প্রকৃতি বন্দী করছিলাম ক্যামেরার ফ্রেমে। কিছুক্ষন পর ওরা ফিরে আসলো ওই দোকানের পিছনেই চাচার বাড়ি সে বাড়িতে রান্না করা যাবে।

ব্যাগ থেকে খুচুড়ি রান্না করার যা যা লাগে সব নিয়ে দ্বীপ কে পাহাড়ায় বসিয়ে আমি আর শ্রাবন রান্নার কাজে চলে গেলাম। এই ফাকে যাদুকাটার জলে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। পানি এত ঠান্ডা যে সর্দি নিয়ে ঢাকার ফিরলাম। রাতে পাভেল ভাই আসার কথা থাকলেও ব্যাক্তিগত কাজে আটকে গেলেন তাই আর আসতে পারলেন না। চাচার দোকানের সাথেই বাড়ি। চাচী টা খুব ভালো ছিলেন আমাদের পাতিল দিলেন, লাকড়ি দিলেন আমরা নিজেরাই রান্না করলাম ভুনা খিচূড়ি সাথে সিদ্ধ ডিম তেলে ভাজি। একটা বলে করে আমাদের খাবারের পরিমান নিয়ে গেলাম বাকীটা উনাদের কয়েকটা বাচ্চা আছে তাদের জন্য দিয়ে দিলাম।প্রায় ঘন্টা খানেক লাগলো এই রান্না পর্ব শেষ করতে।




ওইদিকে দ্বীপ একা একা বসে আছে গহীন অন্ধকারে। বেচারার এটাই প্রথম কোন ক্যাম্পিং ট্যুর। মনে মনে, মনে হয় ভয়ে শেষ। খাবার নিয়ে সবাই বসলাম সাথে স্থানীয় এক ভাই ছিল একটু দুরেই উনার বাড়ি। আমাদের দেখতে এসেছিলেন, আমাদের খানার সাথে উনাকেও শরীক করে নিলাম। নিরিবিলি এই পাহাড়ে বেশ অন্ধকার, অল্প কিছু তারা ছিলো আকাশে আর অনেকটা জায়গা জুড়েই আকাশের বুকে মেঘ জমেছিল। একটু পর পর বিজলী চমকায়। আবার শিয়ালের ডাকাডাকি ও শোনা যাচ্ছিল। দ্রুত খেয়ে নিলাম আমরা আর তাবু একটি গুছিয়ে প্যাক করে ফেললাম যেন বৃষ্টি নেমে গেলেও দ্রুত মুভ করতে পারি। এছাড়াও ব্যাগ পুরো গুছিয়ে বৃষ্টির প্রিপারেশন রাখলাম।

তাবুর সামনে তিনজন বসে আড্ডা জমিয়ে দিলাম। মন চাইছিল এখানেই জীবনটা কাটিয়ে দেই। নিজেরা এবার স্থনীয় লোকেদের কথাগুলো আলোচনা করছিলাম। চারিদিকে অন্ধকার তার মাঝে আমরা তিনজন অচেনা লোক। মনে মনে কিছুটা ভয় থাকলেও রোমাঞ্চটাই ছিলো বেশি। যার ফলে কোন সমস্যা হলনা কারোই। এই বুঝি বিজিবি এলো উঠিয়ে দিল আমাদের। আচ্ছা যদি সত্যিই বিএস এফ এসে ধরে নিয়ে যায় কি হবে আমাদের। এই বুঝি কেউ গুলি করে দিলো আর উড়ে গেল তিনটা প্রান পাখী। যতসব আজগুবি চিন্তা মনে ভাসছিল,আর ভাবছিলাম কতবড় একটা রিস্ক এ আছি আমরা। কারন ভারতীয় বর্ডার এর আচরন সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। দ্বীপ তো একটা সময় বলেই উঠলো ভাই চলেন লোকালয়ে চলে যাই এত রিস্ক দরকার নাই। কিন্তু আমি আর শ্রাবন ছিলাম অনড়। দীপকে বুঝালাম যেখানে যত রিস্ক সেখানেই তত এডভেঞ্চার।

ক্যাম্প ফায়ার তো দূরে থাক তাবুর ভিতরে লাইট জালাতে পর্যন্ত ভয় পাচ্ছিলাম। ওদিকে নদীর ওপাড় থেকে একটু পর পর বিজিবি লাইট মেরে মেরে দেখছে সাথে বিএসএফ ও। যখন ই তাদের লাইট গুলো জলে উঠে আমরা মোবাইলের লাইট পর্যন্ত নিভিয়ে বসে থাকি। পিছন থেকেই আবার ডাকাডাকি শুরু করলো শিয়ালের দল। শিয়াল যে একা পেলে মানুষ কে কতটা হয়রানী করে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। চর কুকরি মুকরী কাটানো সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। শিয়ালের তাড়নায় দল ভাগ করে করে পাহাড়া আর ঘুমিয়েছিলাম।ভাবতে লাগলাম যদি ১৫/২০ টা শিয়াল এক সাথে চলে আসে কি হবে তখন, ভাবতেই গায়ের পশম দাঁড়িয়ে গেলো।

জেগে থাকতে থাকতে ক্ষুধা লেগে গেলো। ব্যাগ থেকে বিস্কুট বের করে খেতে খেতে তিন প্যাকেট শেষ করে ফেলেছি। রাত প্রায় তিন টার দিকে যেন গত দুদিনের ক্লান্ত শরীর ঝিমিয়ে গেলো, দু চোখ জুড়ে নেমে এলো ঘুমের বহর। তিন জন ঢুকে পড়লাম তাবুর ভিতর। দুই সাইটে আমি আর শ্রাবন মাঝে দ্বীপ। যেই না বালিশে মাথা রাখলাম আর দেখি আমাদের তাবু বরাবর আলো আসছে। দ্রুত উঠে তাবুর উপড় দিয়ে তাকাতেই দেখি খুব ঘন ঘন লাইট মেরে দেখে যাচ্ছে বিজিবি ঠিক আমাদের তাবুর দিকেই। এবার বুঝি আর রক্ষা নাই,এই বুঝি তারা এলো তাড়িয়ে দিলো বা ধরে নিয়ে গেলো। আরো মিনিট বিশেক এভাবে চললো। তারপর আপনা আপনি বন্ধ করে দিলো।

আমরা ও আবার শুইলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই দীপের নাক ডাকা শুরু হয়ে গেলো আর শ্রাবণ ও ঘুমের দেশে চলে গেলো। আমার ঠান্ডা লেগে নাক বন্ধ হয়ে আছে তাই শ্বাস নিতে পারছিলাম না । কয়েকবার উঠে বসেছিলাম অনেক্ষন। বাহিরে অনেক বাতাস বইছে, তাবুতে এসে যেই বাড়ি খাচ্ছে বাতাস আর মনে হচ্ছে কে যেন হাটছে বাইরে। তখন কিছুটা ভয়ে চোখ বন্ধ করে জোড় করেই শুয়ে রইলাম।কখন যে ভোরের সূর্য ডাকা শুরু করলো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। উঠে দেখি চারিপাশ বেশ খানেকটা অন্ধকার, সারা আকাশ জুড়ে মেঘেরা আপন মনে খেলে যাচ্ছে। দূর পাহাড়ের কোনে উকি মেরে সে মেঘ গুলোকে পথ দেখাচ্ছে ভোরের সূর্য। যার কিছুটা ছাপের ফলে যাদুকাটা নদী পেয়েছে সকাল সকাল পূর্ণ যৌবন। আর অবিরাম বয়ে চলা শারফিন ঝর্না যেন আরো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। মেলে ধরেছে নিজের সবটুকু রুপ লাবণ্য। পৃথিবী যেন থমকে গেলো, বন্ধ হয়ে গেলো ঘড়ির কাটা। কি যে রুপে আমিও থমকে গেলাম তা বুঝলাম চোখের সামনে দিয়ে হটাত নাম না জানা এক পাখির বিচরনে ফিরে এলাম বাস্তব জীবনে।

দ্বীপ শ্রাবন কে ডেকে উঠালাম। দৃশ্য দেখেতো ওরা অবাক। এতটা সুন্দর করে প্রকৃতি কি আমাদের জন্যই সেজেছে? তাবু থেকে বেড়িয়ে চারিপাশটা ঘুরে বেড়ালাম কিছুক্ষন, সাথে ক্যামেরাতে বন্ধী করলাম যা কিছু সুন্দর। সাতটার দিকে তাবু গুছিয়ে ব্যাগ নিয়ে চাচার দোকানে গিয়ে নুডুলস রান্না করে খেলাম। চাচার দোকানেই আমাদের ব্যাগ রেখে চলে গেলাম কাছেই একটি পাহাড়ি ছড়া দেখতে।একটু নিচে নেমে হাতের ডানে ও বামে দুই দিকে দুইটা ছড়া আছে। ডান দিকের টা ছোট, আর বা দিকের টা নাকি বড়। আমরা ডান দিকের টা দেখে বা দিকের টাতেও গেলাম। বা দিকের টা দেখে তো আমারা পুরাই অবাক। আজ আমাদের ফিরে যাবার দিন। এই ছড়াটি যেন শেষ বেলায় মায়া আরো বাড়িয়ে দিলো বারিক্কার টিলার প্রতি। যেন বলে যাচ্ছে শুধু টিলা দেখতে এসোনা আমাকেও দেখে মুগ্ধ হয়ে যাও, আর নিজেকে শীতল করে নিয়ে যাও আমার জলে ভিজে।




পাহাড়ের উপড় থেকে নিচ অবধি বিভিন্ন ধাপে একদম ফসলের জমিতে নেমে গেছে এই ছড়াটি। এই ছড়াই এই টিলার লোকজনের খাবারের পানির অন্যতম উৎস। কখনো বিশাল পাথরের গা ভিজিয়ে নিজেকে করেছে ভয়ঙ্কর সুন্দর, যার আছড়ে পড়া শব্দ শুনলেই দূর থেকে ছুটে যেতে মন চায়। আবার কখনো ছোট ছোট নুড়ি পাথুরে পথ ধরে শান্ত হয়ে বয়ে গেছে এই ছড়াটি। আমরা শুরু থেকে শেষ অবধি হাটলাম। এই নির্জন টিলায় এমন সুন্দর নয়নাভিরাম এক ছড়া আছে এখনো অনেক পর্যটকের ই সে খবর হয়ত জানা নেই। এই ছড়াটি যেন আমাদের ভ্রমন কে সোনায় সোহাগা করে তুললো আর ভ্রমনের দিলো পূর্ণতা।দুই ঘন্টা ছড়া ভ্রমন শেষে চাচার দোকানে ফিরে এলাম। বিদায় নিয়ে নেমে পড়লাম নিচে যাদুকাটা নদীর পাশে গাছের সাড়ি সাড়ি দেখে হ্যামক টাঙানোর লোভ সামলাতে পারলাম না। তাই এখানে হ্যামক টাঙ্গিয়ে অনেকটা সময় ল্যাটাল্যাটি করে নদী পাড় হলাম। স্রোতের অনুকুলে নৌকা চলছে আর আমার ভেতরটা যেন কেঁদে উঠছে। বার বার ফিরে দেখছিলাম টিলার উপড়টা যেখানে আমরা ছিলাম। যেন মায়া লেগে আছে আর সেও আমাদের কান্না জড়িত কন্ঠে বিদায় জানাচ্ছে আর বলছে আবার এসো।

লাউড়েরগড় থেকে আবার মোটর সাইকেলে করে দুইটার দিকে সুনামগঞ্জ এসে পৌছালাম।শ্যামলির একটা বাস আছে আড়াইটায় তার টিকেট কাটলাম। দুপুরের লাঞ্চ করালো দ্বীপ আমাদের। তারপর দীপের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি আর শ্রাবন রওয়ানা দিলাম নিজেদের গোয়াল ঘরের দিকে। রাত ১১ টায় গোয়াল ঘরে পৌছালাম।বিঃদ্রঃ ক্যাম্পিং করতে গেলে অবশ্যই বিজিবির অনুমতি নিয়ে নিবেন। আর সীমানা তারের থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করবেন। স্থানীয়ের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন এবং ক্যাম্পিং ব্যাপারটি তাদের বুঝিয়ে বলবেন। নিজেদের খাবারের প্যাকেট গুলা যেখানে সেখানে অথবা নদীতে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।এমন কোন ছাপ রেখে আসবেন না প্রকৃতিতে যাতে পরবর্তী কেউ গেলে বুঝতে পারে এখানে কেউ এসে থেকেছিল। প্রকৃতি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।

লেখকঃ মোহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হাসান

বিঃদ্রঃ লেখকের অনুমতি সাপেক্ষে প্রকাশ করা হলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here