মানিকগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান।Places Of Interest In Manikganj District.

0

মত্ত মঠ

মত্ত মঠ

মানিকগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত মত্ত মঠ (Matta Moth) একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন। জানা যায়, প্রায় আড়াইশত বছর পূর্বে পটল গ্রামে হেমসেন নামে একজন অত্যাচারী জমিদার তাঁর পিতার শেষকৃত্য স্থলে এ মঠ নির্মাণ করেন। নিটল দিঘির পাড়ে ১৫ শতাংশ জমির উপর নির্মিত মঠের উচ্চতা প্রায় ২০০ ফুট উঁচু। মত্তের মঠ নির্মাণের জন্য ইরাক থেকে কারিগর আনা হয়েছিল। ১৯৬৫ সালের দিকে একদল আমেরিকান পর্যটক মত্ত মঠ সংস্কারের আগ্রহ প্রকাশ করলেও স্থানীয় প্রভাবশালী হিন্দুদের বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ১৯৭২ সালে একদল চীনা পর্যটক মঠের কারুকার্যপূর্ণ নির্মাণশৈলী দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে।

বেতিলা জমিদার বাড়ি




___________________________________________

বেতিলা জমিদার বাড়ি

বেতিলা জমিদার বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার মানিকগঞ্জ সদর থানার বেতিলায় অবস্থিত। আদতে বেতিলা একটি সবুজ ঘেরা ছিমছাম গ্রাম। বেতিলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে বেতিলা খাল। বেতিলা খাল দিয়ে ধলেশ্বরী ও কালিগঙ্গা নদীতে সহজেই যাওয়া যেত। এরই ফলশ্রুতিতে তৎকালীন সময়ের বড় বড় বণিকেরা এই বেতিলা খালকে নিরাপদ পথ হিসাবে ব্যবহার করতেন। অত্র অঞ্চলের অন্যতম বনিক সত্য বাবুর বসতবাড়িই লোকমুখে বেতিলা জমিদারবাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অজপাড়াগাঁয়ে এমন বিশালাকারের দালান ও আভিজাত্যের প্রকাশ স্থানীয়দের কাছে জমিদারী থেকে কম ছিল না। বর্তমানে সরকারী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এই বাড়ি সেখানের সাইনবোর্ডে বেতিলা জমিদার বাড়ি হিসেবেই পরিচিত এই বাড়ি।বেতিলা জমিদার বাড়ির নির্মাণ এবং তৎকালীন ইতিহাসের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোন সূত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে কলকাতার বনিক জ্যোতি বাবু ছিলেন বেতিলা জমিদার বাড়ির পূর্বপুরুষ। ধারণা করা হয় পাটের ব্যবসার সুবিধার জন্য তিনি এই জমিদার বাড়ি তৈরী করেন।

নাহার গার্ডেন পিকনিক স্পট

নাহার গার্ডেন পিকনিক স্পট

নাহার গার্ডেন পিকনিক স্পট (Nahar Garden Picnic Spot)। ধলেশ্বরী নদীর কোল ঘেষে কোলাহল মুক্ত শান্ত গ্রামীন পরিবেশে সবুজের সমারোহ কিছুটা সময় কাটাতে নাহার গার্ডেন পিকনিক স্পট লেট।মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া ইউনিয়নের কামতা গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে একটি আদর্শ জায়গা।নাহার গার্ডেনে রয়েছে প্রায় তিন হাজার পাখি বিভিন্ন রকম পাখির আবাস। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২০ প্রজাতির টিয়া, ১৫ প্রজাতির ঘুঘু, বাজরাঙ্গা, লাভ বার্ড, ফিনস, ককেটেল, গেরে প্যারেট, মেকাউ ইত্যাদি। এছাড়াও আরো আছে বানর, উট, হরিণ, ইমু পাখি ও ময়ূর। আর শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে একটি শিশু পার্ক।নাহার গার্ডেন পিকনিক স্পটে পিকনিক ছাড়াও বিনোদনের উদ্দেশ্যে টিকেট কেটে যেকেউ প্রবেশ করতে পারে। প্রবেশ টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা। দর্শনার্থীদের জন্য নামাজ ও ক্যান্টিনের সুব্যবস্থা রয়েছে। নাহার গার্ডেন পিকনিক স্পটের রেস্ট রুম ব্যবহারের জন্য আলাদা কোন চার্জ দিতে হয় না। রেস্ট রুমের পাশেই রয়েছে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য পৃথক টয়লেট।

তেওতা জমিদার বাড়ি

তেওতা জমিদার বাড়ি

তেওতা জমিদার বাড়ি (Teota Zamindar Bari) বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী প্রমীলা দেবীর স্মৃতি বিজড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মানিকগঞ্জ এর (Manikganj) শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়িতে কাজী নজরুল ইসলাম প্রমীলা দেবীর রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন –

“তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সেকি মোর অপরাধ”

কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রমীলা দেবীর প্রেমের স্মৃতির সাক্ষী তেওতা জমিদার বাড়ির পাশেই ছিল প্রমীলা দেবীর পিতার বাড়ি। প্রমীলা দেবীর পিতা বসন্ত সেনের ভ্রাতুষপুত্র বীরেন সেনের সঙ্গে কবির সখ্যতার কারণে কবি তাঁদের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত করতে পারতেন। ধারনা করা হয়, তেওতা জমিদার বাড়িটির বয়স প্রায় ৩০০ বছর। মানিকগঞ্জ জেলার ইতিহাস থেকে পাওয়া তথ্য মতে, সপ্তদশ শতকের শুরুতে পাচুসেন নামের দরিদ্র কিশোর তামাকের ব্যবসায় বিপুল অর্থ-সম্পদ অর্জন করে দিনাজপুরের জয়গঞ্জে জমিদারী কিনে পঞ্চানন সেন নামে পরিচিতি লাভ করে। সেসময় মানিকগঞ্জের শিবালয়ের তেওতায় এই জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন।তেওতা জমিদার বাড়ির প্রধান ভবনের উত্তরের ভবনগুলোকে হেমশংকর এস্টেট এবং দক্ষিণের ভবনগুলোকে জয়শংকর এস্টেট নিয়েছিল। প্রতিটি এস্টেটের সামনে নাটমন্দির অবস্থিত, পূর্ব দিকের লালদিঘী বাড়িটি জমিদারদের অন্দর মহল হিসাবে ব্যবহৃত হত। দিঘীতে দুটি শান বাঁধানো ঘাটলা এবং দক্ষিণ পাশে একটি চোরা কুঠুরী বা অন্ধকুপ রয়েছে। উত্তরদিকের ভবনের সামনে ৭৫ ফুট উঁচু ৪ তলা নবরত্ন মঠ রয়েছে। নবরত্ন মঠের ১ম ও ২য় তলার চারদিকে আরো ৪ টি মঠ আছে। প্রায় ৭.৩৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত তেওতা জমিদার বাড়িটি দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে।

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি (Baliati Palace) বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে আনুমানিক ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং ঢাকা জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত। মোট সাতটি স্থাপনা নিয়ে বালিয়াটি জমিদার বাড়িটি অবস্থিত।দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়ির বিভিন্ন ভবন একেক জন উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমে পৃথক পৃথক সময়ে নির্মিত হয়েছে। বালিয়াটি জমিদার বাড়িটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের মাধ্যমে সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা হচ্ছে। আর জমিদার বাড়ির কেন্দ্রীয় ব্লকে রংমহল খ্যাত ভবনে যাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে। বালিয়াটি প্যালেস নামেও পরিচিত এই জমিদার বাড়ি।ঊনবিংশ শতকে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী প্রাসাদের চত্বরটি প্রায় ১৬ হাজার ৫৫৪ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত।সমস্ত জমিদার চত্বর উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং জমিদার বাড়ির মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই সুপ্রশস্ত সবুজের ঢাকা আঙ্গিনা চোখে পড়ে। আঙ্গিনায় গড়ে তোলা হয়েছে সুন্দর ফুলের বাগান। আঙ্গিনার পরেই পাশাপাশি চারটি বহুতল ভবন রয়েছে। এই ভবনগুলোর পেছনেই আছে চারটি পুকুর ও জমিদার অন্দরমহল। প্রাসাদের কক্ষ সংখ্যা ২০০ টি এবং প্রতিটি কক্ষেই সুনিপুণ কারুকাজ লক্ষ্য করা যায়। চুন-সুরকি, লোহার পাত আর কাদামাটিতে নির্মিত ভবনগুলোর প্রতিটি দেয়াল প্রায় ২০ ইঞ্চি পুরু। অনন্য নির্মাণ কৌশল আর কারুকার্য পূর্ণ বালিয়াটি জমিদার বাড়ী তৎকালীন জমপ্রাসাদের কক্ষ সংখ্যা ২০০ টি এবং প্রতিটি কক্ষেই সুনিপুণ কারুকাজ লক্ষ্য করা যায়। চুন-সুরকি, লোহার পাত আর কাদামাটিতে নির্মিত ভবনগুলোর প্রতিটি দেয়াল প্রায় ২০ ইঞ্চি পুরু। অনন্য নির্মাণ কৌশল আর কারুকার্য পূর্ণ বালিয়াটি জমিদার বাড়ী তৎকালীন জমিদারদের অভিজাত্যকেই ফুটিয়ে তোলে।

 

 

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here