সাতৈর মসজিদ
ফরিদপুর জেলা সদর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে বোয়ালমারী উপজেলার সাতৈর গ্রামে সুলতানী আমলের নয় গম্বুজ বিশিষ্ট সাতৈর মসজিদ (Satoir Mosque) অবস্থিত। ধারণা করা হয়, প্রায় ৭০০ বছর আগে শের শাহের আমলে সাতৈর গ্রামের আওলিয়া হযরত শাহ সুফি শায়েফ ছতুরি (রাঃ) পীরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক ষোল শতকের দিকে আলা-উদ্দিন হুসাইন শাহ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদ নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যে এটি পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ায় মসজিদের চারপাশ জঙ্গলে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মসজিদটি সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা হয়। পেন্ডেন্টিভ পদ্ধতিতে নির্মিত এই মসজিদে মোট ৯টি কন্দাকৃতির গম্বুজ রয়েছে। এছাড়াও মসজিদের ভেতরে পাথরের তৈরি ৪টি স্তম্ভ, দেয়াল সংলগ্ন ১২টি পিলার ও পশ্চিম দিকে বহুখাঁজ বিশিষ্ট খিলানযুক্ত ৩টি মেহরাব লক্ষ করা যায়।সাতৈর শাহী মসজিদের পাশে আরও আছে ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড, ১২ আউলিয়ার মাজার এবং একটি গভীর কূপ। মসজিদটি নির্মাণের পর থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে মসজিদটি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের লোক-কথা প্রচলিত ছিল। আর তাই ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিভিন্ন মানত নিয়ে দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই এই মসজিদ দর্শনে আসেন।
মধুমতি নদী
মধুমতি নদী (Madhumati River) বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাগুরা, ফরিদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাটের উপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর একটি শাখা। মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়নে প্রবহমান গড়াই নদী হতে সৃষ্টি হয়ে মাগুরা-ফরিদপুর জেলার সীমানা ঘেঁষে প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নামে নড়াইল ও খুলনা জেলার আঠারবেকিতে বাগেরহাট জেলায় প্রবেশ করে বরিশালের হয়ে হরিণঘাটা মোহনার কাছে বঙ্গোপসাগরের সাথে মিলিত হয়েছে।সর্পিলাকৃতি মধুমতি নদীর দৈর্ঘ্য ১৩৭ কিলোমিটার, প্রস্থ ৫০০ মিটার ও গভীরতা ১০.৫ মিটার। শুষ্ক মৌসুমে সবুজ বর্ণের মধুমতি নদীর পানির প্রবাহ কমে গেলেও বর্ষাকালে পানি নদীর দু’কূল ছাপিয়ে যায়। একসময়, সুন্দরবন অঞ্চল থেকে বাওয়ালীরা এই নদী দিয়ে মধু সংগ্রহ করে বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করত। আর তাই স্থানীয় অনেকের মতে, নদীর সুমিষ্ট জল বা মধু বহনকারী এই নদীর নাম দেওয়া হয়েছে মধুমতি। আর নদীর তীরবর্তী অঞ্চল খুব উর্বর হওয়ার ধান পাটসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই সহায়ক।
মথুরাপুর দেউল
ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে অবস্থিত মথুরাপুর দেউল (Mathurapur Deul) একটি ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।মথুরাপুর দেউল বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার অবস্থিত একটি দেউল বা মঠ। এই প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামোটি আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়; তবে কারো কারো অনুমান এটি সপ্তদশ শতকের স্থাপনা।কথিত আছে সংগ্রাম সিং নামক বাংলার এক সেনাপতি এটি নির্মাণ করেছিলেন। ১৬৩৬ সালে ভূষণার জমিদার সত্রাজিতের মৃত্যুর পর সংগ্রাম সিং অত্র এলাকার রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব লাভ করেন।
কানাইপুর জমিদার বাড়ি
ফরিদপুর জেলা শাসনকারী জমিদারদের আছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। কানাইপুরের শিকদার বংশ তেমনি ফরিদপুরের বিখ্যাত জমিদারদের মধ্যে অন্যতম। প্রায় ৪০০ বছর আগে শিকদার বংশের জমিদার কুমার নদীর পাড়ে বসবাসের জন্য জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন, যা কানাইপুর জমিদার বাড়ি (Kanaipur Zamindar Bari) হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠে। স্রোতস্বিনী পদ্মার ঔরসজাত কুমার নদের পাড়ে গড়ে তোলা হয় ঐতিহাসিক এই কানাইপুর জমিদার বাড়িটি। ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর গ্রামে প্রায় ৪০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় জমিদার বাড়িটি। ফরিদপুরের খ্যাতনামা জমিদারদের ইতিহাসের কানাইপুরের ‘শিকদার বংশ’ ছিলও অন্যতম। তাই ফরিদপুর জেলার স্থানীয় বাসিন্দারা একে শিকদার বাড়ি (Shikdar Bari) হিসেবেই চিনেন।উল্লেখ্য, ১৮১৮ সালে এই জমিদারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে হাজী শরিয়তুল্লাহর নেতৃত্বে ফরায়েজি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে হাজী শরিয়তুল্লাহর পুত্র দুদু মিয়া ফরায়েজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
ফরিদপুর পৌর শেখ রাসেল শিশুপার্ক
___________________________________________