টাঙ্গাইল জেলার দর্শনীয় স্থান।Places Of Interest In Tangail District.

0

মহেরা জমিদার বাড়ি

মহেরা জমিদার বাড়ি




___________________________________________

মহেড়া জমিদার বাড়ির মত সুন্দর এবং যত্নে সংরক্ষিত জমিদার বাড়ি বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। টাঙ্গাইল সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে আট একর জায়গা জুড়ে মহেড়া জমিদার বাড়ি বিস্তৃত। মহেড়া জমিদার বাড়ি প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অমূল্য নিদর্শন স্বরূপ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।এই জমিদার বাড়ির প্রবেশ পথেই রয়েছে বিশাল দুইটি সুরম্য গেট। বিশাল তিনটি প্রধান ভবনের সাথে নায়েব সাহেবের ঘর, কাছারি ঘর, গোমস্তাদের ঘর, দীঘি ও আরো তিনটি লজ রয়েছে। প্রবেশ পথের আগেই বিশাখা সাগর নামে একটি দীঘি আছে। মূল ভবনে পিছনের দিকে পাসরা পুকুর ও রানী পুকুর নামে আরো দুইটি পুকুর রয়েছে।এই জমিদার বাড়ীতে তিনটি ভবন রয়েছে যথাক্রমে চৌধুরী লজ,

করটিয়া জমিদার বাড়ি

করটিয়া জমিদার বাড়ি

করটিয়া জমিদার বাড়ি (Karatia Jomidar Bari) টাঙ্গাইল শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে পুটিয়ার নদীর তীরে অবস্থিত। জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নী মোগল ও চৈনিক স্থাপত্য কৌশলে বাড়িটি নির্মাণ করেন। প্রাকৃতিক এবং নিরিবিলি পরিবেশের এই জমিদার বাড়িটি প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ০.৫ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট প্রাচীরঘেরা যেখানে রয়েছে লোহার ঘর, রোকেয়া মহল, রাণীর পুকুরঘাট, ছোট তরফ দাউদ মহল এবং বাড়িসংলগ্ন মোগল স্থাপত্যের আদলে গড়া মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য।  মসজিদটিতে মোট আটটি গম্বুজ ও ১৫ ফুট উঁচু একটি মিনার রয়েছে। করটিয়া জমিদার বাড়ি করটিয়া রাজবাড়ী (Karatia Rajbari) নামেও পরিচিত।

পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি (Pakutia Zamindar Bari) টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। জমিদার বাড়ির তিনটি মহলের রয়েছে নিজস্ব বিশিষ্ট ও অপূর্ব লতাপাতার কারুকাজ। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িতে বি.সি.আর.জি.ডিগ্রী কলেজ চালু আছে। পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি কাছেই আছে নাটমন্দির, কালীমন্দির এবং একটি বিশাল পুকুর।ইংরেজ আমলের শেষ দিকে এবং পাকিস্তান আমলের দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তৎকালীন ব্রিটিশ রাজাধানী কলকাতার সাথে মেইল স্টিমারসহ মাল এবং যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস চালু ছিল। একপর্যায়ে নাগরপুরের সাথে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে পশ্চিম বঙ্গ কলকাতা থেকে আসেন রামকৃষ্ণ সাহা মন্ডল (ধনাঢ্য ব্যক্তি)।ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তিনি পাকুটিয়ায় জমিদারী শুরু করেন। প্রায় ১৫ একর এলাকা জুড়ে একই নকশার পর পর তিনটি প্যালেস বা অট্টালিকা নির্মাণ করা হয় (১৯১৫)। তখন জমিদার বাড়িটি তিন মহলা বা তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল।তিনটি নাট মন্দির যা তিনটি বাড়ীর সামনে অবস্থিত। দ্বিতল বিশিষ্ট নাচঘরটি মাঠের মাঝখানে রয়েছে। উপেন্দ্র সরোবর নামে বিশাল একটি আট ঘাটলা পুকুর রয়েছে।

আতিয়া মসজিদ

আতিয়া মসজিদ

আতিয়া মসজিদ বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদ যা বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দক্ষিণে দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া গ্রাম। এ গ্রামের লৌহজং নদীর পূর্ব পারে অবস্থিত আতিয়া মসজিদ। লাল ইটে তৈরি এ মসজিদটির স্থাপত্য শৈলী অত্যন্ত চমৎকার। মসজিদটি মূলত বর্গাকৃতির এক গম্বুজ বিশিষ্ট। বাইজিদ খান পন্নীর পুত্র জমিদার সাইদ খান পন্নী ১৬১০ সালে আতিয়া মসজিদটি নির্মাণ করেন। ১৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১২ মিটার প্রস্থের মসজিদটির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে লৌহজং নদী।আতিয়া মসজিদের পূর্ব ও উত্তর দিকের দেয়ালে টেরাকোটার উপর স্থান পেয়েছে ফুলের নকশা। মসজিদের পূর্বদিকে তিনটি প্রবেশ পথ ছাড়াও উত্তর – দক্ষিণে আরো দুটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। লাল ইটে তৈরি আতিয়া মসজিদটিতে সুলতানি ও মুঘল স্থাপত্যরীতির নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। ১৮০০ সালের ভূমিকম্পে আতিয়া মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ১৮৩৭ এবং ১৯০৯ সালে মসজিদটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মুদ্রিত দশ টাকা মূল্যমানের নোটের একপার্শ্বে আতিয়া মসজিদের ছবি রয়েছে।

মোকনা জমিদার বাড়ি

মোকনা জমিদার বাড়ি

নাগরপুর উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী মোকনা জমিদার বাড়ি (Munkona Zamidar Bari) টাঙ্গাইল জেলার প্রাচীন জমিদার বাড়ীগুলোর মধ্যে অন্যতম এক দর্শনীয় স্থান। দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট মোকনা জমিদার বাড়িটি ফুল লতা-পাতার বিভিন্ন কারুকার্যে সুসজ্জিত। কালের বিবর্তনে জমিদার বাড়ির আদিম সৌন্দর্য ও কারুকার্যময় নকশা বিলীন হয়ে গেলেও নাগরপুরের তৎকালীন জমিদারিত্বের প্রতীক হিসেবে শত বছরের পুরনো এই জমিদার বাড়িটি আজো টিকে আছে।পাকুল্লা মসজিদ

সাগরদীঘি

সাগরদীঘি

টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার পূর্বে ঐতিহাসিক সাগরদীঘি (Sagardighi) অবস্থিত। প্রায় ১৩ একর জায়গা জুড়ে পাল আমলের সাগর রাজার নেতৃত্বে এই বিখ্যাত দীঘিটি খনন করা হয়। সাগরদীঘিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এলাকার পূর্ব নাম “লোহিনি” হলেও বর্তমানে এটি সাগরদীঘি নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

লোকমুখে প্রচলিত আছে সাগর রাজা প্রজাদের পানির কষ্ট দূর করার উদ্দেশ্যে এই জলাশয়টি খনন করেছিলেন।খননের পর জলাশয়ে কোন পানি উঠেনি, রাজা এক স্বপ্নাদেশে রানীকে দীঘিতে নামানোর নির্দেশনা পান। পরবর্তীতে রানীকে দীঘিতে নামানোর পর পরই দীঘি পানি ভরে উঠলে রানীর জীবন বিপন্ন হয়। আবার অনেকের মতে, সাগর নামের ধর্মপরায়ণ এক কুমোরের আত্নত্যাগের মাধ্যমে এই দীঘিতে পানি উঠেছিল, যার ফলস্বরূপ দীঘির নামকরন করা হয় সাগর কুমোরের দীঘি বা সাগরদীঘি।

পোড়াবাড়ির চমচম

পোড়াবাড়ির চমচম




___________________________________________

টাঙ্গাইলের বিখ্যাত পোড়াবাড়ির চমচমের (Porabari Chomchom) কথা শুনেনি এমন মানুষ হয়তো খুব কমই আছে। প্রায় দুইশ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য বজায় রেখে বানানো পোড়াবাড়ির চমচমের সুনাম রয়েছে বিশ্বজোড়া।এই সুস্বাদু ও লোভনীয় চমচম মিষ্টি টাঙ্গাইলের অন্যতম একটি ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য প্রায় ২শ’ বছরের প্রাচীন। অর্থাৎ বৃটিশ আমল থেকে অবিভক্ত ভারতবর্ষসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোড়াবাড়ির চমচম টাঙ্গাইলকে ব্যাপক পরিচিতি করেছে। বাংলা বিহার ছাড়িয়ে ভারত বর্ষ তথা গোটা পৃথিবী এর সুনাম রয়েছে।এই ঐতিহাসিক চমচমের গুণেই মূলত টাঙ্গাইল জেলা বিশ্ববাজারে পরিচিতি লাভ করে।টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির ধলেশ্বরী নদীর তীরে ছোট্ট একটি গ্রামে এই মিষ্টান্ন বানানো হয়। ধারনা করা হয়, চমচম বানানোর ক্ষেত্রে ধলেশ্বরী নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। আর এ কারণে কারিগররা বিশ্বাস করেন টাঙ্গাইল শহরের বাইরে গিয়ে এই মিষ্টি বানানো সম্ভব না। প্রাচীন কালে মিষ্টি প্রস্তুতকারীদের হালই বলা হতো। পোড়াবাড়ির চমচম বানাতে দেশি গাভীর দুধ দিয়ে তৈরি ছানার সাথে চিনি ব্যবহার করা হয়। সুস্বাদু পোড়াবাড়ির চমচমের প্রধান কারিগর সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া না গেলেও “যশোরাথ” নামের এক কারিগরকে এই মিষ্টির প্রচলক বলে ধারনা করা হয়। পরবর্তীতে পোড়াবাড়ি গ্রামের ঘোষ ও পাল বংশের লোকেরা বংশানুক্রমে চমচম তৈরির সাথে জড়িত হন।বর্তমানে পোড়াবাড়ি বাজার, চারাবাড়ি বাজার, সন্তোষ মিলিয়ে ১৩টি মিষ্টি তৈরীর কারখানা রয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলের মিষ্টি পট্টি এলাকা এবং পুরো শহর জুড়ে প্রায় ৫০টি মিষ্টির দোকান রয়েছে।ঐতিহ্যবাহী পোড়াবাড়ির চমচম বর্তমান সময়ে বিভিন্ন উৎসব অনুস্থানে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

পরীর দালান

রীর দালান

ঐতিহাসিক পরীর দালান (Porir Dalan) টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার হেমনগর গ্রামে অবস্থিত। হেমনগর জমিদার বাড়ি হিসাবেও সুপরিচিত পরীর দালানের মোট জমির পরিমাণ প্রায় ৬০ একর।পরীর দালানের দেয়াল, পিলার এবং দরজায় রঙ্গিন কাচে তৈরি ফুল, লতা, তারা, গাছের নকশা, দামি কড়ি ও পাথরে সুসজ্জিত দুইটি পরীর ভাস্কর্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজবাড়ির উপর নির্মিত দুইটি রাজসিক পরীর ভাস্কর্যের কারণেই মূলত এই দালানের নাম হয় এঞ্জেল হাউজ বা পরীর দালান।জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরীর পিতা কালিবাবু চৌধুরী সূর্যাস্ত আইনের আওতায় শিমুলিয়া পরগণার জমিদারি কিনে নেন। হেমচন্দ্র চৌধুরী ১৮৮০ সালে মধুপুর উপজেলার আমবাড়িয়া রাজবাড়ি পরিত্যাগ করে গোপালপুর উপজেলার সুবর্ণখালি গ্রামে দ্বিতীয় রাজবাড়ি নির্মাণ করেন। হেমচন্দ্র চৌধুরীর নামানুসারে এলাকার নাম পরিবর্তন করে হেমনগর রাখা হয়। পরবর্তীতে ১৮৯০ সালে সুবর্ণখালি গ্রাম যমুনা নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়লে হেমচন্দ্র চৌধুরী সুবর্ণখালি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে শিমলা পাড়া গ্রামে এই পরীর দালান নির্মাণ করা হয়।।ভবনের চূড়ায় দু’টি রাজসিক পরীর অলঙ্করণ রয়েছে। হয়তো এ কারণেই নাম হয়েছে পরীর দালান। প্রাচীর ঘেরা ভবনের শানবাঁধানো ঘাটসহ পুকুর, দু’টি খোলা মাঠ এবং দশটি পাসা কুয়া আছে। এই ভবনের ভেতর বিভিন্ন সাইজের ২৫টি কক্ষ আছে। দোতালা এ আবাসিক ভবন সামনের দিক থেকে দেখতে তিনটি অংশে বিভক্ত। এই পরীর দালানের অনতিদূরে আরো রয়েছে ৭টি সুরম্য ভবন ।মাত্র একশ বছরের বেশী সময় আগে নির্মিত এই বাড়ী এখণ দর্শনীয় স্থান।

২০১ গম্বুজ মসজিদ

২০১ গম্বুজ মসজিদ

২০১ গম্বুজ মসজিদ (201 Gombuj Masjid/The 201 Dome Mosque) টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত, যা ইতিমধ্যেই পৃথিবীর সর্বাধিক সংখ্যক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের স্বীকৃতি পেয়েছে।একটি মসজিদ। নির্মাতাদের দাবি, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম্বুজবিশিষ্ট এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনারের মসজিদ। ২০১ গম্বুজ মসজিদের মিনারগুলো ৪৫১ ফুট উচ্চতার। ১৫ বিঘা জমির ওপর ৫৭ তলা উচ্চতার বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি মিনারের মসজিদটি নির্মিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনাই নদীর তীরে অবস্থতি এ মসজিদটি। মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিলো ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি। এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের মা রিজিয়া খাতুন।  মসজিদের চার কোণায় ১০১ ফুট উঁচু ৪ টি মিনার মিনার রয়েছে। এছাড়াও ৮১ ফুট উচ্চতার চারটি মিনার পাশাপশি স্থাপন করা হয়েছে। আর মসজিদের পাশে মূল মিনারটি নির্মাণ করা হয়েছে, যার উচ্চতা ৪৫১ ফুট। ২০১ গম্বুজ মসজিদে এক সঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের সুযোগ রয়েছে। মসজিদের দেয়ালে অংকিত রয়েছে সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ। আর মসজিদের প্রধান দরজা তৈরীতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০ মণ পিতল।এছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে লাশ রাখার হিমাগার, বিনা মূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুর্নবাসনের ব্যবস্থা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here