দিনাজপুর রাজবাড়ী
দিনাজপুর শহরের খুব কাছে অবস্থিত দিনাজপুর রাজবাড়ী (Dinajpur Rajbari) অত্র জেলার ইতিহাস ও ঐশ্বর্যের প্রতীক হিসাবে পরিগণিত হয়ে আসছে। ১৯৫১ সালে জমিদারী প্রথার বিলুপ্তির পর থেকে দিনাজপুর রাজবাড়ীর জৌলুশে ভাটা পড়তে থাকে। দিনাজপুর রাজবাড়ীর সর্বশেষ জমিদার জগদীশনাথ ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে এই রাজবাড়িটি কালের সাক্ষী হিসাবে টিকে আছে।দিনাজপুর রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে আছে কুমার মহল, আয়না মহল, রাণী মহল, লক্ষ্মী ঘর, আটচালা ঘর, ঠাকুর বাড়ী, কালীয়া জিউ মন্দির, আতুর ঘর, রাণী পুকুর, চাঁপা তলার দিঘী ইত্যাদি। এছাড়া এই জমিদার বাড়ি হতে প্রাপ্ত রাজ বংশের ব্যবহৃত বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন ঢাকাস্থ জাতীয় জাদুঘর ও দিনাজপুর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।
দীপশিখা স্কুল, দিনাজপুর
দিনাজপুর জেলা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে বিরল উপজেলার রুদ্রপুরে অবস্থিত দীপশিখা স্কুল (Dipshikha School) মাটির তৈরি একটি ভিন্নধর্মী বিদ্যানিকেতন। স্থানীয় মানুষের ঐতিহ্য ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে এই বিদ্যালয়ে। রুদ্রপুর গ্রামের শিশুদের প্রায় ৭ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হতো। ফলে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশুনা বাদ দিয়ে কৃষি বা অন্যান্য কাজে জড়িয়ে পড়ত। ২০০২ সালে রুদ্রপুর গ্রামে গবেষণার কাজে অস্ট্রেলিয়ার লিজ ইউনিভার্সিটি থেকে Anna Herigar সহ আরো ১০ জন শিক্ষার্থী আসেন। গবেষণা শেষে অন্যরা ফিরে গেলেও Anna Herigar তাঁর গবেষণা ও স্থাপত্যবিদ্যা কাজে লাগিয়ে রুদ্রপুরের অনুন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারের লক্ষ্যে একটি স্কুল বানানোর পরিকল্পনা করেন। তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে জার্মানির উন্নয়ন সংস্থার আধুনিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এবং বাংলাদেশের বেসরকারি সেবা সংস্থা দীপশিখা। যার ফলশ্রুতিতে ২০০৬ সালে METI Handmade School নির্মাণ করা হয়।স্থানীয় কাচামাল, বাঁশ ও কাদামাটি দিয়ে নির্মিত দীপশিখা মেটি স্কুল (Dipshikha Meti School) হিসেবে অধিক পরিচিত। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ৮,০০০ বর্গফুটের দোতালা স্কুলের প্রতি তালায় তিনটি করে কক্ষ এবং দোতালায় যাওয়ার জন্য বাঁশ দিয়ে নির্মিত উন্মুক্ত সিঁড়ি রয়েছে। নিচের অংশের মোটা মাটির দেয়ালের প্লাস্টার হিসেবে মাটি, বালু ও খড় মেশানো কাঁদা দেওয়া হয়েছে। উপরের তালায় বাঁশের পাটাতনের উপর চাটাই ও মাটি দিয়ে এবং দোতালার বাঁশের সাথে কাঠ দিয়ে ছাদ দেওয়া হয়েছে।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রংপুর বিভাগে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (Hajee Mohammad Danesh Science & Technology University)। তেভাগা আন্দোলনের জনক কৃষকনেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখা হয়। ১৯৭৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনিস্টিটিউট হিসেবে এবং তখন এখান থেকে কৃষিতে ডিপ্লোমা ডিগ্রী প্রদান করা হত। এরপর ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এটি স্নাতক পর্যায়ের কৃষি কলেজে উন্নীত হয়। ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এই কৃষি কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়া হয়। এরই ফলশ্রুতিতে ২০০২ সালের ৮ এপ্রিল মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে স্থাপিত হয় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৩০ একর আয়তনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধীনে ২২ টি বিষয়ে সনদ প্রদান করা হয়।
নয়াবাদ মসজিদ
দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে কাহারোল উপজেলার নয়াবাদ গ্রামে ১.১৫ বিঘা জমির উপর নয়াবাদ মসজিদ (Nayabad Mosque) নির্মাণ করা হয়েছে। নয়াবাদ মসজিদের দেয়ালে প্রাপ্ত ফলকের তথ্য মতে, ১৭৯৩ সালে সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্ব কালে এই মসজিদটি তৈরী করা হয়। তৎকালীন সময়ে রাজা বৈদ্যনাথ ছিলেন দিনাজপুর রাজ পরিবারের সর্বশেষ বংশধর। স্থানীয়দের মতে, ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কান্তনগর মন্দির তৈরীতে আগত মুসলমান স্থপতি ও শ্রমিকদের মাধ্যমে নয়াবাদ মসজিদটি নির্মিত হয়।নয়াবাদ মসজিদের ছাদে ৩ গম্বুজ এবং চার কোণে অষ্টভুজাকৃতির ৪ টি মিনার রয়েছে। মসজিদের দেয়ালের পুরুত্ব ১.১০ মিটার। পশ্চিম দিকে ৩টি মিম্বারের বিপরীত পাশে মসজিদে প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা স্থাপন করা হয়েছে। নয়াবাদ মসজিদের নকশায় অসংখ্য টেরাকেটার ব্যবহার থাকলেও বর্তমানে মাত্র শখানেক টেরাকোটা অবশিষ্ট আছে। আর মসজিদের পাশে একটি কবর লক্ষ করা যায়, তবে কবরটি কার সে সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট (Shopnopuri Artificial Amusement Park) বা বিনোদন কেন্দ্রটি দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জে প্রায় ৪০০ একর ভূমির উপর গড়ে তোলা হয়েছে। সড়কপথে দিনাজপুর থেকে স্বপ্নপুরী দূরত্ব প্রায় ৫২ কিলোমিটার। সমগ্র বাংলাদেশ থেকে প্রচুর দর্শনার্থী চিত্তবিনোদনের জন্য স্বপ্নপুরীতে বেড়াতে আসেন। এছাড়া এখানে বিভিন্ন চলচিত্র নির্মিত হওয়ায় স্বপ্নপুরী সহজেই মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পটে আসলে একে একে দেখতে পাবেন কৃত্রিম লেক, পাহাড়, উদ্যান, বৈচিত্র্যপূর্ণ গাছগাছালি এবং ফুলের বাগান, বিভিন্ন প্রতিকৃতি, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম পশুপাখি, ফুলবাগিচা, কৃত্রিম ঝর্ণা, ইটখলা, ঘোড়ার রথ, শালবাগান, হংসরাজ সাম্পান, খেলামঞ্চ, নামাজ জায়গা, কুঞ্জ, বিভিন্ন ভাস্কর্য, মাটির কুটির, ডাকবাংলো, বাজার এবং ভূমিতে নির্মিত বাংলাদেশের মানচিত্র। এছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশের মোহনীয় সৌন্দর্য্য তো আছেই!
রামসাগর দীঘি