নেত্রকোণার দর্শনীয় স্থান সমূহ।Places Of Interest In Netrokona

0

উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী




নেত্রকোনা জেলা থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে দূর্গাপুরের বিরিশিরিতে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী (Ethnic Cultural Academy) অবস্থিত। মূলত বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে বসবাসরত হাজং, কোচ, ডালু, মান্দাই, বানাইসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ করার লক্ষ্য নিয়ে উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা নিজস্ব ভাষা, সামাজিক প্রথা, পোশাক- পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাস, আচার- অনুষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। কালের বিবর্তনে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনেকটাই হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সংস্কৃতি বিশ্ব পরিমণ্ডলে তুলে ধরতে ১৯৭৭ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রাণালয়ের একটি বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩.২১ একর জায়গার উপর উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এই কালচারাল একাডেমী “ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক আইন” অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে।

ডিঙ্গাপোতা হাওর

নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত ডিঙ্গাপোতা হাওর (Dingapota Haor) দেশের বৃহত্তম হাওরগুলোর মধ্যে অন্যতম। ঋতুভেদে ভিন্ন ভিন্ন নবরূপে এই হাওরের সৌন্দর্য ফুটে উঠে। বর্ষাকালে হাওরের অথৈ জলের ধারা, শুষ্ক মৌসুমে চারপাশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য সবকিছুই প্রকৃতিপ্রেমী দর্শনার্থীদের মোহিত করে। তবে সকল মৌসুমেই হাওরের বিশাল জলরাশির গভীরতম স্থানে থাকা আধডোবা হিজল গাছ, জলরাশির উচ্ছল ঢেউ ও নীল আকাশের মিতালী চোখে পরে। বিশেষ করে শরৎ ও হেমন্তকালে হাওরের দুপাড়ের সবুজ সোনালি ধানক্ষেত ও নীলচে আকাশের সৌন্দর্য দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশী আকর্ষণ করে।এছাড়া মাছের মৌসুমে হাওরের পাড়ে জেলেদের পরিবার নিয়ে অস্থায়ী আবাসস্থল গুলো কাছ থেকে হাওরের জেলেদের জীবনযাপন দেখার সুযোগ করে দেয়। এখান থেকে ইচ্ছে হলে হাওরের বিভিন্ন তাজা মাছ কিনে নেয়া যায়। প্রকৃতির দানে অপরূপ ডিঙ্গাপোতা হাওর নেত্রকোনা জেলার পর্যটন শিল্পে এক বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে।




কমলা রাণী দিঘী

দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের কাছে ঐতিহ্যবাহী কমলা রাণী দিঘী (Komola Ranir Dighi) অবস্থিত। অনেকের কাছে এটি সাগর দিঘী নামেও সুপরিচিত। প্রচলিত আছে, পনের শতকের শেষ ভাগে সুসং দুর্গাপুরের রাজা জানকি নাথ কমলা দেবী নামে এক সুন্দরী রমনীকে বিয়ে করেন। প্রজা হিতৈষী রাজা জানকি নাথের ঘরে পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সন্তানের নাম রাখা হয় রঘুনাথ। প্রজাদের পানির অভাব দূরীকরণের জন্য রাজা জানকি নাথ একটি পুকুর খনন করেন। তবে পুকুরে পানি না উঠায় রাজা চিন্তায় পড়ে গেলেন।এরপর এক রাতে রাজা স্বপ্নে দেখতে পান রাণী কমলা দেবী যদি মাঝ পুকুরে গিয়ে পূজো দেন তাহলেই পুকুর পানিতে ভরে উঠবে। রাণীও প্রজাদের কথা ভেবে পুকুরের মাঝখানে পূজা দিতে সম্মত হলেন। হঠাৎ চারিদিক দিয়ে পানি উঠতে উঠতে রাণী কমলা দেবীকে ডুবিয়ে দিল। অনেকের মতে, বজ্রপাতের কারণে দীঘির তলার মাটি ফেটে পানিতে ভরে যায়। রাজা জানকি নাথ এমন ঘটনায় বিচলিত হয়ে গেলেন। সর্বদা রাজার সন্তান রঘুর জন্য দুশ্চিন্তা করতেন। আবারো এক রাত্রে রাজা স্বপ্নে দেখলেন তিনি যদি শিশু সন্তান রঘুকে পুকুরের পাড়ে রেখে আসেন তবে রাণী কমলা দেবী রঘুনাথকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। কিন্তু শর্ত হল যে, রাজা কোনক্রমে রাণীকে ছুঁতে পারবেন না।




সাত শহীদের মাজার

নেত্রকোণা জেলার কমলাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ফুলবাড়ি শান্ত এক গ্রাম। গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে গারো পাহাড়ের ভিতর দিয়ে বয়ে আসা গনেশ্বরী নদী। আমাদের সীমান্তের ভিতরেই রয়েছে বেশ কিছু পাহাড় ও টিলা, আর সীমান্তের বাইরে যতদূর চোখ যায় দেখা যায় মেঘালয়ের পাহাড় রাজ্য। চারপাশে অগনিত মেহগনি গাছের সারির নির্জন সেই জায়গায় সমাহিত আছেন ৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। এই জায়গা সাত শহীদের মাজার নামে পরিচিত।

বিরিশিরি




বিরিশিরি (Birishiri) নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। বিরিশিরির বিজয়পুরে আকর্ষনীয় চীনামাটির পাহাড় ও নীল পানির হ্রদ রয়েছে। বিজয়পুরের এই চীনামাটির পাহাড় এবং সমভূমি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৬ কিলোমিটার ও প্রস্থে ৬০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। হ্রদের নীল জল নিমিশেই সমস্ত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে দেয়। হ্রদের অপরুপ নীল জলের প্রধান উৎস হচ্ছে সমেশ্বরী নদী। এই নদী বর্তমানে কয়লা খনি হিসেবে অধিক পরিচিত। নীল জ্বলের হ্রদের মতই সোমেশ্বরী নদী আপন রুপে অনন্যা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here