পটুয়াখালীর দর্শনীয় স্থান সমূহ।Places Of Interest In Patuakhali

0

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অবস্থান পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার লতাচাপলি ইউনিয়নে। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত (Kuakata Sea Beach) থেকে একই সাথে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়। এই বৈশিষ্ট কুয়াকাটাকে সকল সমুদ্র সৈকত থেকে অনন্য করেছে। সূর্যোদয় সবচেয়ে ভাল দেখা যায় সৈকতের পূর্ব প্রান্তের গঙ্গামতির বাঁক থেকে। আর সূর্যাস্ত দেখার ভাল জায়গা হচ্ছে কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকত। সৈকতের এক পাশে বিশাল সমুদ্র আর অন্য পাশে আছে নারিকেল গাছের সারি। কুয়াকাটার পরিচ্ছন্ন বেলাভূমি, অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত, দিগন্তজোড়া সুনীল আকাশ এবং ম্যানগ্রুভ বন কুয়াকাটাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
প্রায় সারা বছর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখা যায়। সৈকতে চাইলে মটর সাইকেল ও ঘোড়া ভাড়া করতে পারেন। ভাড়ার টাকার পরিমাণ সাধারণত দূরত্ব ও সময়ের উপর নির্ভর করে। এছাড়া কুয়াকাটার কাছেই কয়েকটি চর রয়েছে। সেগুলিতে যেতে স্পিডবোট, ট্রলার ও ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকা পাওয়া যায়। এছাড়াও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছেই রয়েছে পিকনিক করার সমস্ত আয়োজন।




কানাই বলাই দিঘী

পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী কানাই বলাই দিঘী (Kanai Bolai Dighi) অবস্থিত। স্থানীয়দের বিশুদ্ধ পানির অভাব পূরণের জন্য এই দিঘীটি খনন করা হয়েছিল। কানাই বলাই দীঘির আনুমানিক দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার ও প্রস্থ ১৪০ মিটার। প্রায় তিনশত বছরের প্রাচীন দিঘীকে নিয়ে নানা ধরণের লোককথা জড়িয়ে আছে। কথিত আছে, প্রায় শত বছর আগে কাছিপাড়া গ্রামে কানাই-বলাই নামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী দুই ভাই থাকতো। একদিন এই দুই ভাই খেজুর গাছের বাঁকল ভেবে বিশাল আকৃতির দুটি গজাল মাছের উপর বসেছিল। পরবর্তীতে মাছগুলো দুই ভাইকে গভীর জলে নিয়ে যায়। এরপর আর কোনদিন দুই ভাইয়ের দেখা মিলেনি। এই ঘটনার পর থেকে দীঘিটি কানাই বলাই দিঘী হিসেবে পরিচিতি পায়। আবার অনেকের মতে, ভালো মন ও সৎ উদ্দেশ্যে এই দীঘির কাছে কিছু চাইলে তা পূরণ হয় এবং কেউ যদি কানাই বলাই দিঘীকে ভক্তি না করে কিংবা কটূক্তি করে তাহলে তার বিপদ আসে।
স্থানীয়দের মতে, কানাই বালাই দিঘীর পানিতে মন বাসনা পূরণ করার এক আধ্যাত্মিক ক্ষমতা আছে। আর এ কারণে দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন মানত নিয়ে মানুষ কানাই বলাই দিঘীতে স্নান করতে আসে। মন বাসনা পূরণের পাশাপাশি নিজের দেহ ও মনকে পবিত্র করার উদ্দেশ্য নিয়েও অনেকে গোছল করে থাকেন। প্রতিবছর ফাল্গুন মাসের ৯-১১ তারিখ দিঘীর পাড়ে ওরশের আয়োজন করা হয়। তখন ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ বিশ্বাস, ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিয়ে এখানে আসেন। যদিও বর্তমানে বিভিন্ন আগছা, কচুরিপানা ও মাটিতে দিঘীটির এক তৃতীয়াংশ ভরে গিয়ে এক জরাজীর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে।

লেবুর চর

পটুয়াখালী জেলার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে লেবুর চর (Lebur Char) অবস্থিত। স্থানীয়দের কাছে লেবুর চর নেম্বুর চর হিসেবেও পরিচিত। ১০০০ একর আয়তনের লেবুর চরে কেওড়া, গেওয়া, গোরান, কড়ই, গোলপাতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ আছে। অতীতে এটি সুন্দরবনের অংশ হিসাবে থাকলেও বর্তমানে এই চর সুন্দরবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
লেবুর চরের শেষ প্রান্তে দাঁড়ালে সুন্দরবনের সবুজ গাছের সারি দেখা যায়। সূর্যাস্তের সময় বিস্তীর্ণ চরে আছড়ে পড়া সূর্যের সোনালি আভা চারপাশে এক মনোমুগ্ধকর অপার্থিব দৃশ্যের অবতারণ করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত লেবুর চর পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীর স্থান হিসেবে পরিচিত।




মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ

পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের এক অন্যতম নিদর্শন মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ (Majidbaria Shahi Masjid)। আনুমানিক সাড়ে ৫শ বছর পূর্বে স্থাপিত এই শাহী মসজিদটি সুলতানি আমলের মুসলিম স্থাপত্য ও ঐতিহ্যের গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী। মসজিদের নামানুসারেই এই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে। মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদের শিলালিপির থেকে জানা যায়, ১৪৬৫ সালে ইলিয়াস শাহী বংশের নবাব রুকনুদ্দিন বরবকের আমলে খান-ই-মোয়াজ্জেম উজিয়াল খান এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।
আকর্ষণীয় নির্মাণশৈলী ও কারুকার্যখচিত মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদ নির্মাণে চুন-সুরকি ও পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছে। বিশাল গম্বুজ বিশিষ্ট প্রাচীন এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৯ ফুট ও প্রস্থ ৩৫ ফুট। মজিদবাড়িয়া শাহী মসজিদের মূল কাঠামোতে রয়েছে ৩টি দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য খচিত মেহরাব, তিনটি খিলান পথ, আট কোণায় ৬টি মিনার সদৃশ পিলার, পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ দিকে মোট ৪টি জানালা, বর্গাকৃতির প্রধান কামরা ও একটি বারান্দা। এছাড়া ৭৫ ইঞ্চি পুরত্বের দেয়াল বিশিষ্ট এই মসজিদের ভিতরে কারুকার্যখচিত প্রাচীন কিছু নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। আর মসজিদের দক্ষিণ পাশের আছে ইয়াকিন শাহ্‌ ও কালা শাহের কবর এবং একটি বিশাল দীঘি।

সোনারচর




পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত নয়ানাভিরাম একটি সমুদ্র সৈকতের নাম সোনারচর (Sonarchar)। পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা থেকে সোনারচরের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। সাগরের মাঝে অবস্থিত সোনারচর দ্বীপের দুর্গম ও বিপদসঙ্কুল যোগাযোগ ব্যবস্থা যেন সৌন্দর্য পাগল পর্যটকদের অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে। তাই অনেকেই প্রকৃতির রূপ দেখতে ছুটে যান সোনারচরে। চঞ্চল সাগরের ঢেউ, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, সৈকত জুড়ে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ এবং জীববৈচিত্রপূর্ণ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল পর্যটকদের মোহিত করে আপন মহিমায়।
পটুয়াখালী (Patuakhali) জেলায় আগত বেশির ভাগ পর্যটকই কুয়াকাটা দেখেই ফিরে যান। তাই পর্যটকের চাপহীন থাকে সোনারচরের সমুদ্র সৈকত ও বনাঞ্চল। সোনারচর সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। কুয়াকাটার মত সোনাচর দ্বীপের একই স্থান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্থ উপভোগ করা যায়। দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের নীল জলরাশি ঘেরা সোনারচর সমূদ্র সৈকতে বালিতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে যেন সোনার মতই মনে হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here