পঞ্চগড় দর্শনীয় স্থান সমূহ।Places Of Interest In Panchagarh

0

মহারাজার দিঘী

পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক পুকুরের নাম মহারাজার দীঘি (Maharajar Dighi)। ধারণা করা হয়, ভিতরগড় নামের ১৫০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক এক রাজ্যে মহারাজা পৃথু রাজত্ব করাকালীন এই দীঘিটি খনন করেন।বিশালায়তনের স্বচ্ছ পানির এই জলাশয়ের পাড় সহ মোট আয়তন প্রায় ৮০০ x ৪০০ গজ এবং পানির গভীরতা প্রায় ৪৫ ফুট। গাছগাছালিতে ঘেরা মহারাজার দীঘির চারপাশে প্রায় ১০টি ঘাট রয়েছে। কথিত আছে, পৃথু রাজা তার পরিবার পরিজন ও ধনরত্ন সাথে নিয়ে “কীচক” নামক এক নিম্নশ্রেণী দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়ে তাদের সংস্পর্শে ধর্মনাশের ভয়ে এই দীঘিতে আত্নহনন করেছিলেন।




বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট

পঞ্চগড় জেলার অন্তর্গত বাংলাদেশের সর্বোত্তরের উপজেলার নাম তেঁতুলিয়া। তেঁতুলিয়া উপজেলার ১নং বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট (Banglabandha Zero Point) এবং বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের অবস্থান। হিমালয়ের কোল ঘেঁষা মহানন্দা নদীর তীরে ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী প্রায় ১০ একর জমিতে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট অর্থাৎ বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর নির্মাণ করা হয়। বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের মাধ্যমে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট গেলে কংক্রিট দিয়ে নির্মিত বিশালাকৃতির একটি জিরো চোখে পড়বে। বলা যায় বাংলাদেশের সীমানে এই জিরো পয়েন্ট থেকেই শুরু হয়েছে। এখানকার চারপাশ সবুজে ঢাকা এবং খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, যা যেকারো মন ভাল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ। বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট ফটকের কাছে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের জাতীয় পতাকা টানানো থাকে। যদিও অনুমতি ছাড়া সেখানে প্রবেশ করা যায় না।

তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা

বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার (যার উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার বা ২৮,১৬৯ ফুট) সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়। তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে কুচবিহারের রাজা কতৃক নির্মিত ভিক্টোরিয়ান ধাঁচে বানানো একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো রয়েছে। বর্তমানে ডাকবাংলোটি জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় আছে। ডাকবাংলোর কাছেই তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে পিকনিক স্পট নির্মাণ করা হয়েছে। মহানন্দা নদীর তীরে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা ডাকবাংলোর বারান্দা থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষাকালে মহানন্দা নদী যখন পানিতে ভরে উঠে তখন কাঞ্চনজঙ্ঘাকে আরো বেশি অপূর্ব লাগে। পঞ্চগড়ের আরো বেশকিছু স্থান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড় দেখা গেলেও তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো সবচেয়ে ভাল জায়গা। এখান থেকে সবচেয়ে ভাল ভাবে দেখা যায়।




মির্জাপুর শাহী মসজিদ

মির্জাপুর শাহী মসজিদ (Mirzapur Shahi Masjid) বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম। পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। মির্জাপুর শাহী মসজিদটি প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো। ঢাকায় অবস্থিত হাইকোর্ট মসজিদের নকশার সাথে মির্জাপুর শাহী মসজিদের নকশার অনেক মিল চোখে পড়ে।আয়তকার মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ২৪ ফুট। মসজিদের ছাদে পাশাপাশি ৩টি গম্বুজ এবং চারকোণে ৪ টি চিকন মিনার আছে। অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য মসজিদের সামনের দেয়ালে আছে ৩ টি দরজা। প্রত্যেক দেয়াল ও দরজায় বিভিন্ন কারুকার্যময় নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নকশায় স্থান পেয়েছে টেরাকোটা প্লাক, ফুল ও লতাপাতার প্রতিরুপ। মসজিদের রয়েছে ফরাসি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি, যা দেখে মোঘল সম্রাট শাহ আলমের রাজত্বকালে মসজিদটি তৈরী বলে মনে করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মির্জাপুর শাহী মসজিদের সার্বিক তত্ত্বাবধান করে।

চা বাগান




চা বাগানের কথা আসলেই সর্ব প্রথমেই আমাদের চোখে ভেসে উঠে সিলেটের শ্রীমঙ্গলের ছবি কিন্তু দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতেও যে বাণিজ্যিক ভাবে চা চাষ সম্ভব তা এখানে না আসলে বিশ্বাস করা কঠিন। প্রায় ১৫০ বছর আগে বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন শুরু হলেও পঞ্চগড়ে ১৯৯৮ সালে প্রথম চা চাষ শুরু হয়। তৎকালীন সময়ে পঞ্চগড়ের জমি পতিত থাকতে দেখে শিল্পপতি কাজী শাহেদ আহমদ ভারতের চা বাগান (Tea Garden) দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে চায়ের চাষ শুরু করেন।অর্গানিক পদ্ধতিতে চা চাষের ক্ষেত্রে কাজী টি এস্টেটই অগ্রপথিক রুপে প্রতিষ্ঠিত। কাজী টি এস্টেট ছাড়াও পঞ্চগড়ে ডাহুক টি এস্টেট, স্যালিলেন টি এস্টেট ও তেঁতুলিয়া চা করপোরেশন লিমিটেড বেশকিছু প্রতিষ্ঠান চা উৎপাদন করছে। বর্তমানে পঞ্চগড়ে দুই শতাধিক চা বাগান রয়েছে এবং চা চাষের মোট জমির পরিমাণ ২২৫৫ দশমিক ৫৪ একর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here