ঢাকার দর্শনীয় স্থান সমূহ।Places Of Interest In Dhaka

0

লালবাগ কেল্লা

লালবাগ কেল্লা (Lalbagh Fort) রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত।সম্রাট আওরঙ্গজেব লালবাগ কেল্লা নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তাঁর পুত্র যুবরাজ শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে লালবাগ দূর্গের নির্মাণ কাজ আরম্ভ করেন। কিন্তু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই আওরঙ্গজেব তাঁকে দিল্লিতে ডেকে পাঠান। তাঁর উত্তরসূরি শায়েস্তা খান ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করলেও দুর্গের কাজ সমাপ্ত করেন নি। ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে শায়েস্তা খানের কন্যা বিবি পরী এখানে মারা গেলে দুর্গটিকে তিনি অপয়া হিসেবে বিবেচনা করে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।শুরুতে লালবাগ কেল্লার নাম দেয়া হয়েছিল আওরঙ্গবাদ দূর্গ বা আওরঙ্গবাদ কেল্লা।  ১৮৪৪ সালে আওরঙ্গবাদ এলাকাটির নাম পরিবর্তন করে লালবাগ রাখা হয়। এলাকার নামের সাথে সাথে কেল্লাটির নামও পরিবর্তিত হয়ে লালবাগ কেল্লা হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।বর্তমানে সুবেদার শায়েস্তা খাঁনের বাসভবন ও দরবার হল ‘লালবাগ কেল্লা জাদুঘর’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। লালবাগ কেল্লায় তিনটি ফটক থাকলেও এর মধ্যে দুইটিকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।প্রবেশ পথ ধরে সোজা এগিয়ে গেলে সামনে দেখাতে পাওয়া যায় শায়েস্তা খাঁনের কন্যা পরীবিবির স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত সমাধি সৌধ। সমাধি সৌধটি বর্গাকৃতির এবং এর প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ২০.২ মিটার। মার্বেল পাথরে তৈরী সমাধি সৌধটি অনন্য কারুকার্যপূর্ণ এবং মূল সমাধি সৌধের উপরের তামার পাত দিয়ে মোড়ানো একটি কৃত্রিম গম্বুজটি রয়েছে।




আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। আহসান মঞ্জিলের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ঢাকার শত বছরের পুরনো ইতিহাস। ঢাকার পুরনো স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় আহসান মঞ্জিলকে। নবাব পরিবারের বহুল স্মৃতি বিজড়িত এই প্রাসাদটি বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জামালপুর[২] পরগনার জমিদার শেখ ইনায়েতউল্লাহ আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থান রংমহল নামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ রংমহলটি ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। বাণিজ্য কুঠি হিসাবে এটি দীর্ঘদিন পরিচিত ছিল। এরপরে ১৮৩০-এ বেগমবাজারে বসবাসকারী নওয়াব আবদুল গনির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এটি ক্রয় করে বসবাস শুরু করেন। এই বাসভবনকে কেন্দ্র করে খাজা আবদুল গনি মার্টিন অ্যান্ড কোম্পানী নামক একটি ইউরোপীয় নির্মাণ ও প্রকৌশল-প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরী করান, যার প্রধান ইমারত ছিল আহসান মঞ্জিল। ১৮৫৯ সালে নওয়াব আবদুল গনি প্রাসাদটি নির্মাণ শুরু করেন যা ১৮৭২ সালে সমাপ্ত হয়। তিনি তার প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘আহসান মঞ্জিল’। ওই যুগে নবনির্মিত প্রাসাদ ভবনটি রংমহল ও পুরাতন ভবনটি অন্দরমহল নামে পরিচিত ছিল।১৮৮৮ সালের ৭ এপ্রিল প্রবল ভূমিকম্পে পুরো আহসান মঞ্জিলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত আহসান মঞ্জিল পুনর্নির্মাণের সময় বর্তমান উঁচু গম্বুজটি সংযোজন করা হয়। এর প্রাসাদোপরি গম্বুজটি শহরের অন্যতম উঁচু চূড়া হওয়ায় তা বহুদূর থেকেও সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করত।আহসান মঞ্জিল কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে অতি সম্প্রতি। এখন এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত একটি জাদুঘর।




রোজ গার্ডেন প্যালেস

পুরান ঢাকার টিকাটুলির কেএম দাস লেনে রোজ গার্ডেন (Rose Garden) নামের প্রাসাদসম বাড়িটি অবস্থিত যা বলধা গার্ডেন থেকে অল্প দূরত্বে। পাশেই রয়েছে খ্রিষ্টান কবরস্থান। ১৯৪৯ সালে এই রোজ গার্ডেনেই গঠিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। শ্বেত পাথরের মূর্তি, কৃত্রিম ফোয়ারা, ঝর্ণা, শান বাঁধানো পুকুর ও অনন্য স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত ভাস্কর্য– এক রাজকীয় বাগানবাড়ি রোজ গার্ডেন।  ১৯ শতকে হৃষিকেস দাস নামের এক হিন্দু জমিদার বিনোদনের জন্য রোজ গার্ডেন প্যালেসটি নির্মাণ করেন। তৎকালীন সময় বিত্তবান হিন্দুদের সামাজিক অনুষঙ্গ হিসাবে বলধা গার্ডেনে জলসার আয়োজন করা হত। হৃষিকেস দাস ছিলেন নিন্মবর্ণের ফলে এক জলসায় তিনি অপমানের স্বীকার হন। এরপর হৃষিকেস দাস বিনোদনের জন্য রোজ গার্ডেন প্যালেস তৈরী করেন এবং এখানেই জলসার আয়োজন করতেন। ঐ সময়ে এই বাগানবাড়ির নয়নাভিরাম সাজঘর ছিল মূল আকর্ষণ। বেহিসাবী জীবনযাপনের জন্য একসময় হৃষিকেস দাস দেউলিয়া হয়ে সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হন।১৯৩৬ সালে হৃষিকেস দাসের কাছ থেকে খান বাহাদুর কাজী আব্দুর রশিদ এই বাগানবাড়িটি কিনে নেন। তিনি এই বাড়ির নাম পরিবর্তন করে রশিদ মঞ্জিল রাখেন। পরবর্তীতে কাজী আব্দুর রশিদের বড় ছেলে কাজী মোহাম্মদ বশির (হুমায়ুন) আজ পর্যন্ত এই বাড়ির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। শুরুতে এই বাগানবাড়ি শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি হলেও পরবর্তীতে এর মালিকরা এতে বসবাসও শুরু করেন।রোজ গার্ডেন প্যালেসের এক ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। ১৯৪৯ সালে এই রোজ গার্ডেনেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। বাড়িটির নীচতলায় একটি হলরুম, আটটি কক্ষ ও করিনথিয়ান কলাম রয়েছে। উপর তলায় আরো একটি হল সহ আরও পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। একসময় প্রাসাদ প্রাঙ্গণে একটি ঝর্ণা ছিল, বর্তমানে ঝর্ণাটি চালু না থাকলেও এর চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। প্রাসাদের সামনে বাগানে রয়েছে মার্বেলের তৈরি কয়েকটি সুদৃশ্য মূর্তি। তবে যেই গোলাপের বাগানের জন্য এই প্রাসাদটির নামকরণ রোজ গার্ডেন প্যালেস করা হয়েছিল সেই গোলাপ বাগান বর্তমানে নিশ্চিহ্ন।

বাহাদুর শাহ পার্ক

পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী উদ্যানের নাম বাহাদুর শাহ পার্ক (Bahadur Shah Park)। ১৮৮৫ সালের ১৭-ই ফেব্রুয়ারী স্যার সলিমুল্লাহর পুত্র খাজা হাফিজুল্লাহ স্মরণে বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের পার্কে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয়।আঠারো শতকের শেষের দিকে বাহাদুর শাহ পার্কের স্থানে আর্মেনীয়দের একটি বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল। স্থানীয়রা বিলিয়ার্ড বলকে আন্টা নামে ডাকত ফলে ক্লাব ঘর ও ক্লাব সংলগ্ন মাঠ আন্টাঘর এবং আন্টা ময়দান নামে পরিচিতি লাভ করে। তারপর ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর সাধারণ মানুষের মনে ভয় জাগাতে ইংরেজ শাসকেরা বিপ্লবী সিপাহিদের লাশ এনে আন্টা ময়দানের বিভিন্ন গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখেছিল। পরবর্তীতে ১৮৫৮ সালে রানী ভিক্টোরিয়া কতৃক ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণের ঘোষনাপত্র আন্টা ময়দানে পাঠ করা হয় এবং সে কারণে এ স্থানটি ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে নতুন পরিচয় লাভ করে। ১৯৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে ভিক্টোরিয়া পার্কে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে পার্কের নাম বাহাদুর শাহ পার্ক করা হয়।ডিম্বাকৃতির এই পার্কটিকে ঘিরে ৭টি রাস্তা একত্রিত হয়েছে। গাছপালার ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশের বাহাদুর শাহ পার্কে আরও আছে নবাবজাদা খাজা হাফিজুল্লাহ স্মরণে তৈরী স্মৃতিস্তম্ভ এবং সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্মিত ফোয়ারা। ১৯৫৭ সালে নবাব খান বাহাদুর পার্কটির নাম পরিবর্তন করে বাহাদুর শাহ পার্ক রাখেন।

সাউথ টাউন জামে মসজিদ




_____________________________________________

রাজধানী ঢাকার কেরানীগঞ্জের সাউথ টাউন আবাসিক প্রকল্পে সাউথ টাউন জামে মসজিদ (South Town Jame Masjid) অবস্থিত। নজরকারা স্থাপত্যশৈলী ও বৈচিত্র্যময় নির্মাণ মসজিদকে দিয়েছে বাড়তি স্বতন্ত্রতা।মসজিদ মূলত প্রাথর্নার স্থান হলেও নির্মাণশৈলীর নান্দ্যনিকতায় সৌন্দর্য প্রেমী মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে সাউথ টাউন জামে মসজিদ। তাই সহজেই দেশজুড়ে মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে এই মসজিদের বার্তা। ফলে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী মসজিদটি দেখতে ও নামাজ আদায় করতে আসেন।প্রায় দুই বছর সময় ধরে নির্মিত সাউথ টাউন মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে ৩টি প্রধান ফটক ও দুই পাশে একটি করে মোট ৫টি প্রবেশ পথ রয়েছে। আর মসজিদের অভ্যন্তরে আলোবাতাস প্রবেশের জন্য আছে অসংখ্য জানালা। আধ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত মসজিদটিতে একত্রে প্রায় ৬০০ মুসল্লি নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা আছে৷

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

রাজধানী ঢাকার সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (Jagannath University)। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৫৮ সালে যাত্রা শুরু করলেও ২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ হতে এই প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. সিরাজুল ইসলাম খান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য।জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বনাম জগন্নাথ কলেজ। এই নামেই বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ সময় জুড়ে পরিচিত ছিল। ১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে এর প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৭২ সালে এর নাম বদলে জগন্নাথ স্কুল করা হয়। বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। ১৮৮৪ সালে জগন্নাথ স্কুল দ্বিতীয় শ্রেণীর কলেজের মর্যাদা লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণীর কলেজে পরিণত হয়।

যমুনা ফিউচার পার্ক




_____________________________________________

যমুনা ফিউচার পার্ক ঢাকা শহরের অভিজাত জায়গা কুড়িল, বারিধারা, প্রগতি সরণি ও গুলশান এর মত জায়গার কাছাকাছি। এটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এর খুব নিকটে অবস্থিত।[ এর কাছ থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার খুব কাছাকাছি যা কিনা খুলে দেওয়া হয় ২০১৩ সালের অগাস্ট মাসে।যমুনা ফিউচার পার্ক (Jamuna Future Park) দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বহুতল শপিং মল হিসাবে পরিচিত। ২০০২ সালে যমুনা বিল্ডার্স লিমিটেড প্রায় ৪,১০০,০০ বর্গফুট আয়তনের এই সুবিশাল শপিং কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর যমুনা ফিউচার পার্ক সফলভাবে খুলে দেয়া হয়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটু দূরে কুড়িল ফ্লাইওভার কাছে অবস্থিত যমুনা ফিউচার পার্ক প্রাঙ্গণে প্রবেশের শুরুতেই রয়েছে স্কাইড্রপ, রোলার কোস্টার, পাইরেট শিপ, ম্যাজিক উইন্ডমিল, ফ্লাইং ডিসকো ও টাওয়ার চ্যালেঞ্জারের মতো শিহরণ জাগানিয়া ৬টি রোমাঞ্চকর আউটডোর রাইড।যমুনা ফিউচার পার্কে আছে দেশি বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের বিক্রয় কেন্দ্র, ফুডকোর্ট, রেষ্টুরেন্ট, ব্লকবাস্টার সিনেমাস, প্লেয়ারস জোন এবং সুপরিসর কার পার্কিং। কেনাকাটার পাশাপাশি চিত্তবিনোদনের জন্য এই শপিং কমপ্লেক্সে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।

তিন নেতার মাজার

রাজধানী ঢাকার দোয়েল চত্বরের কাছে অবস্থিত তিন নেতার মাজার (Teen Netar Mazar) বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন। বাংলাদেশের জাতীয় তিন নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন এবং এ কে ফজলুল হক-এর সমাধির উপর ১৯৬৩ সালে স্থপতি মাসুদ আহমদ ও এস এ জহিরুদ্দিনের নকশায় তিন নেতার মাজার স্থাপনাটি নির্মাণ করা হয়েছে। তিন নেতার মাজারের কাছেই রয়েছে হাইকোর্ট এবং শিশু একাডেমি।স্বাধীনতার পূর্ব সময়ে এই তিন মহান নেতাই তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিন নেতার রাজনৈতিক চর্চার বিশেষ অবদান রয়েছে। বাংলার বাঘ খ্যাত শের-এ-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী। ফজলুল হক ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া যুক্তফ্রন্ট গঠনে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।খাজা নাজিমুদ্দিন ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৫১ সালে তাঁকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করা হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯২৪ সালে কলকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র হন এবং খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রীসভায় তিনি শ্রমমন্ত্রী নিযুক্ত ছিলেন। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

রমনা পার্ক

রমনা পার্ক (Ramna Park) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের প্রানকেন্দ্র রমনা এলাকায় অবস্থিত সুনিবিড় ছায়া ঘেরা পরিবেশের একটি মনোরম উদ্যান। প্রতিষ্ঠার সময় অর্থাৎ ১৬১০ সালে রমনা পার্কটি পুরানো হাইকোর্ট ভবন থেকে বর্তমান সড়ক ভবন পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রমনা পার্কের বর্তমান আয়তন ৬৮.৫০ একর। প্রতি বছর ছায়ানটের উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী রমনা পার্কের বটমূলে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।ঐতিহ্যবাহী এই পার্কটি ঘন ঘাস, লতাগুল্ম, ছোট ও মাঝারি গাছ, মৌসুমি ফুলে সমৃদ্ধ। এখানে রয়েছে অতি দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ ও পাখি। রমনায় রয়েছে ১৯টি রেইন্ট্রি গাছ। এর একেকটি গাছ বড় হলে দেড় বিঘা জায়গা দখল করবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। রয়েছে ৩৫০টি মেহগনি গাছও। সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে জাম, জলপাই, হরিতকি, পেয়ারা গাছ। পার্কের উত্তর পাশ লাগোয়া হেয়ার রোডে রয়েছে পাদাউক গাছ। পার্কে অসংখ্য গাছপালার ভিড়ে কিছু ফল এবং ঔষধি গাছও দেখা যায়। সবচেয়ে পুরনো মহুয়াগাছটি পার্কের প্রায় মাঝখানে অবস্থিত ছিল।




_____________________________________________

বায়তুল মোকাররম মসজিদ

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানের খুব কাছে পল্টন এলাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ (Baitul Mukarram National Mosque)-এর অবস্থান। ১৯৬০ সালের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারম নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন বাওয়ানি জুট মিলসের তৎকালীন মালিক বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তাঁর ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানি। সিন্ধুর বিশিষ্ট স্থপতি এ এইচ থারানির নকশায় নির্মিত বায়তুল মোকাররম মসজিদের জন্য পল্টনে ৮.৩০ একর জমি বরাদ্দ রাখা হয়। ১৯৬২ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।মসজিদের নকশায় বৈচিত্র প্রদানের উদ্দেশ্যে গম্বুজ পরিহার করে কাবা ঘরের আদলে চারকোনা কাঠামো তৈরী করা হয়েছে। ৮ তলা বিশিষ্ট বায়তুল মোকাররম মসজিদের নিচ তলায় বিভিন্ন বিপণিবিতান ও গুদামঘর রয়েছে। মসজিদের ২য় তলা থেকে ষষ্ঠ তলা নামায আদায়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। ২য় তলা থেকে খতিব নামাজ পড়িয়ে থাকেন। ৩য় তলার উত্তর পাশে নারীদের নামায আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। বায়তুল মোকাররম মসজিদে একসাথে প্রায় ৩০ হাজার মুসল্লি নামায আদায় করতে পারেন। মসজিদে প্রবেশে জন্য উত্তর, দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে পৃথক পৃথক প্রবেশ পথ রয়েছে।

সাত গম্বুজ মসজিদ

রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সাত গম্বুজ মসজিদ (Sat Gambuj Mosque) মুঘল শাসনামলে নির্মিত একটি ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মসজিদের ছাদে বড় ৩টি এবং চার কোণে অবস্থিত ৪টি মিনারের উপর অনুগম্বুজ সহ মোট সাতটি গম্বুজের কারণে মসজিদটি সহজেই সাত গম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে। মোগল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর পুত্র উমিদ খাঁ ১৬৮০ সালে এই সাত গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন। সাত গম্বুজ মসজিদের সাথে লালবাগ দুর্গ মসজিদ এবং খাজা আম্বর মসজিদের অনেক মিল লক্ষ করা যায়।মসজিদের পশ্চিম দিকে রয়েছে অজুখানা এবং উত্তর-পূর্বকোণে একটি কবরস্থান রয়েছে। সামনে রয়েছে ছোটখাটো একটি উদ্যান। সেখানে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।এদিকে মসজিদের রাস্তার অপর পাশে রয়েছে একটি সমাধি। বলা হয়ে থাকে এটি শায়েস্তা খাঁর মেয়ের সমাধি। যদিও এর সত্যতা নিয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাই এটি অজানা সমাধি হিসেবে পরিচিত। একসময় এই মসজিদ বুড়িগঙ্গার খুব কাছেই অবস্থিত ছিল। কালের বিবর্তনে নদী ভরাট হয়ে এখন মসজিদের চারপাশে বড় বড় অট্টালিকা গড়ে উঠেছে। এছাড়া মসজিদের কাছেই আছে একটি উদ্যান এবং জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা। এক কালে বুড়িগঙ্গা নদীর ধারা সাত গম্বুজ মসজিদের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বর্তমানে চারপাশে বেশকিছু ছোট বড় দালানকোঠা নির্মিত হয়েছে।




হোসেনী দালান

হোসেনী দালান (Hossaini Dalan) বা ইমামবাড়া মূলত কারাবালার প্রান্তরে শাহাদাৎ বরণকারী ঈমাম হোসেনের স্মৃতির স্মরনে নির্মিত শিয়া সম্প্রদায়ের একটি উপসনালয়। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত এই স্থাপনাটি প্রায় ৩০০ বছরের পুরানো। অনুমান করা হয় ১৭শ শতকে মোগল সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে হোসেনী দালান ভবনটি নির্মাণ করা হয়। বিকল্প উচ্চারণ হুস্নী দালান এবং ইমারতের গায়ে শিলালিপিতে ফারসী ভাষায় লিখিত কবিতা অনুসারে উচ্চারণ হোসায়নি দালান। এটি মোগল শাসনামলে ১৭শ শতকে নির্মিত হয়। ইমারতটি মুহাম্মদের পৌত্র হোসেনের কারবালার প্রান্তরে মৃত্যুবরণ স্মরণে নির্মিত।এই স্থানটি শিয়া মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয় হিসেবে পরিচিত। এর স্থাপত্যকলা মনোমুগ্ধকর। প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো এ স্থাপনা মোগল আমলের ঐতিহ্যের নিদর্শন। মোগল সম্রাট শাহজাহানের আমলে এটি নির্মিত হয়।হোসেনী দালানের দক্ষিণাংশে রয়েছে একটি বর্গাকৃদির পুকুর। এর উত্তরাংশে শিয়া বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের কবরস্থান অবস্থিত। দালানটি সাদা বর্ণের, এবং এর বহিরাংশে নীল বর্ণের ক্যালিগ্রাফি বা লিপিচিত্রের কারূকাজ রয়েছে।প্রতিবছর মহরম মাসের প্রথম ১০ দিন পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে হোসেনী দালান উৎসব মুখরিত হয়ে উঠে। সে সময় এখানে বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এছাড়াও মহরমের ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল এখান থেকেই যাত্রা করে।




_____________________________________________

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি সুপরিসর নগর উদ্যান। এটি পূর্বে রমনা রেসকোর্স ময়দান নামে পরিচিত ছিল। এক সময় ঢাকায় অবস্থিত ব্রিটিশ সৈন্যদের সামরিক ক্লাব এখানে প্রতিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তীতে এটি রমনা রেস কোর্স এবং তারপর রমনা জিমখানা হিসাবে ডাকা হত। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পর মাঠটিকে কখনও কখনও ঢাকা রেস কোর্স নামে ডাকা হত এবং প্রতি রবিবার বৈধ ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত। এক সময় এখানে ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করা হলেও বর্তমানে বিভিন্ন সবুজ বৃক্ষের সুশীতল ছায়াঘেরা স্থান হিসাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সর্বজন স্বীকৃত।আরও একটি ঐতিহাসিক পটভূমির জন্য সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান বাংলাদেশীদের কাছে জনপ্রিয়। এখানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের সেই বিশ্বকাপানো মহাকাব্য উপস্থাপন করেন। আর ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। স্বাধীনতার স্বারক হিসাবে এখানে তাই নির্মাণ করা হয়েছে শিখা চিরন্তন এবং স্বাধীনতা স্তম্ভের মত নান্দ্যনিক স্থাপনা।রমনা রেসকোর্সের দক্ষিণে পুরানো হাইকোর্ট ভবন, তিন জাতীয় নেতা শেরে-বাংলা এ. কে ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দিন এবং হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী-এর সমাধি (তিন নেতার মাজার); পশ্চিমে বাংলা একাডেমী, অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, চারুকলা ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, পাবলিক লাইবে্ররি এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর; উত্তরে বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা ক্লাব ও ঢাকার টেনিস কমপ্লেক্স এবং পূর্বে সুপ্রীম কোর্ট ভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here