রাজশাহীর দর্শনীয় স্থান সমূহ।Places Of Interest In Rajshahi

0

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর




বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর (Varendra Research Museum) হলো বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর, যা ১৯১৩ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র হাতেম খাঁন মহল্লায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। রাজশাহী অঞ্চলের সনাতন ইতিহাস, ধর্মীয় রীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদির বিশাল এক সংগ্রহ আছে এখানে। প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরটি বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটির একটি বড় অর্জন। শরৎকুমার রায় এবং তাঁর সহযোগী অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, রমাপ্রসাদ চন্দ প্রমুখ প্রত্ন-অনুরাগী এই প্রতিষ্ঠান দুটি গড়ে তোলার জন্য তাঁরা তাঁদের সময় ও শ্রম ব্যয় করেন। তাঁদের সারা জীবনের প্রয়াস ছিল ওই সময়ের টিকে থাকা অমূল্য প্রত্নসম্পদ (বাংলার, বিশেষ করে বরেন্দ্রীর) জনসম্মুখে প্রকাশ করা। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এটি পরিচালনা করে থাকে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বরেন্দ্র জাদুঘরটির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ২০১০ সালের শেষের দিকে বড় অঙ্কের অনুদান দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যার পরিমাণ ৯৪ হাজার ৯৩৩ ডলার। সেই টাকায় ২০১১ সালের জুলাই মাস থেকে জাদুঘরের আধুনিকায়নের কাজ শুরু করা হয়। এই অর্থে জাদুঘরের কয়েকটি ভবনের ছাদ নতুন করে তৈরি করা হয়, মূর্তির জন্য বানানো হয়েছে আধুনিক মঞ্চ। প্রতিটি গ্যালারিতে বৈদ্যুতিক বাতি ও ইলেক্ট্রিসিটির সংযোজন করা হয়। ভবনের মেঝে কংক্রিটের কাজ করা হয়। এছাড়া ভবনের বেশ কয়েকটি দরজায় গ্রিল লাগানো হয়। এতে গবেষণা জাদুঘর অনেকটা ছোঁয়া পেয়েছে আধুনিকতার।বরেন্দ্র জাদুঘরের ১ থেকে ৭ নম্বর গ্যালারির মধ্যে বেশ কয়েকটিতে কাচের ফ্রেম বানিয়ে বিভিন্ন মৃৎপাত্র, পুতুল ও ছোট ছোট মূর্তি সাজিয়ে রাখা হয়েছে পরিপাটি করে। এক বছর আগেও এসব মৃৎপাত্র ও মূর্তিগুলোর কোন পরিচয় লিখিত আকারে না থাকলেও তা এখন সংযোজন করা হয়েছে। ফ্রেমগুলোর ওপর ছাদের সঙ্গে লাগানো হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি। জাদুঘরের সব মূর্তি ধুয়েমুছে সাফ করা হয় সার্বক্ষণিক। এখন দর্শনার্থীদের সেরা আকর্ষণীয় একটি সংগ্রহশালা।

বাঘা মসজিদ




রাজশাহী থেকে বাঘার দূরত্ব প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার। বাঘার সবজয়গাতেই আছে আমের বাগান। আম বাগান দেখতে চলে যেতে পারেন ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদ। প্রাচীন এ মসজিদ ইট দিয়ে তৈরি। মূল মসজিদের চারপাশে চারটি ও মাঝখানে দুই সারিতে পাঁচটি করে মোট দশটি গম্বুজ আছে। মসজিদের পূর্বপাশে পাঁচটি দরজা আছে। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের চারটি দরজাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।প্রায় ২৩.১৬ মি দৈর্ঘ্য এবং ১২.৮০ মিটার প্রস্থের এই মসজিদ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ছাদ ধ্বংস হয়ে যায়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ পরে গম্বুজসহ ছাদটি পুনঃনির্মাণ করেন। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে রয়েছে প্রচুর পোড়া মাটিরফলক। মসজিদের ভেতরে উত্তর-পশ্চিম কোণে একটু উঁচুতে নির্মিত একটি বিশেষ নামাজ কক্ষ আছে। এটি নিয়ে মতবিরোধ আছে। অনেকে মনে করেন এটি মহিলাদের নামাজের জায়গা ছিল। আবার অনেকের মতে কক্ষটি শুধু সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত গভর্নরের জন্যই সংরক্ষিত ছিল। বাঘা মসজিদের পূর্ব পাশে আছে বিশাল আকৃতির একটি দীঘি।মসজিদের পাশেই আছে একটি কবরস্থান। বেশ কয়েকজন বুজুর্গ ব্যক্তি শায়িত আছেন এখানে। জনশ্রুতি আছে হযরত শাহ দৌলা দানেশ মন্দ (র.) পাঁচজন সঙ্গীসহ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাগদাদ থেকে বাঘায় আসেন খ্রিস্টীয় ১৫০৫ সালে। সুলতান নসরত শাহও তার ভক্ত ছিলেন বলে যানা যায়। শাহ দৌলা এ অঞ্চলে বাঘের পিঠে চড়ে বেড়াতেন বলে জায়গাটির নাম বাঘা, এ কথা প্রচলিত আছে লোকমুখে।

পুঠিয়া রাজবাড়ী




রাজশাহী (Rajshahi) জেলার অন্যতম উপজেলা ও উপজেলা সদরদপ্তর পুঠিয়া। রাজশাহী শহর হতে ত্রিশ কিলোমিটার পূর্বে এবং রাজশাহী-নাটোর মহসড়ক হতে মাত্র এক কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত পুঠিয়া রাজবাড়ি (Puthia Rajbari)। পুঠিয়া রাজবাড়ি বাংলাদেশে বিদ্যমান অন্যান্য রাজবাড়িগুলোর চেয়ে মোটামুটি সুরক্ষিত এবং নজরকাড়া স্থাপত্যে সজ্জিত।পুঠিয়া বাজারে দক্ষিণ পার্শ্বে দ্বিতল বিশিষ্ট আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত পুঠিয়া রাজবাড়িটি একটি আকর্ষণীয় ইমারত। বহুকক্ষ বিশিষ্ট রাজবাড়ীর প্রধান প্রবেশপথ সিংহ দরজা উত্তরদিকে অবস্থিত। জমিদার বা রাজারা এখান থেকে তাদের রাজ কর্ম পরিচালনা করতেন। এ রাজবাড়ীতে দোষী ব্যক্তিদের শাসিত দানের ব্যবস্থাসহ বন্দীশালার ব্যবস্থা ছিল। চুন সুড়কীর মসলনা ও ছোট আকৃতির ইট দ্বারা নির্মিত বাজবাড়ীর সম্মুখভাগে আকর্ষণীয় ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। রাজবাড়ির নিরাপত্তার জন্য চারপার্শ্বে জলাশয়ের ব্যবস্থা ছিল। স্থানীয় জমিদার পরিবারের সদস্যদের দ্বারা উনবিংশ শতাব্দীতে এটি নির্মিত হয়েছিল। রাজবাড়ির প্রত্নতত্তণ অধিদপ্তরের নিয়মত্রণাধীন পুরাকীর্তির হলেও বর্তমানে এটি লস্করপুর ডিগ্রী কলেজ (Loshkorpur Degree College) হিসেবে ব্যবহ্নত হচ্ছে।পুঠিয়া রাজবাড়ির চারিদিক পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত। বর্তমানে পরিখাগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিত যথা- শিব সরোবর বা শিবসাগর, গোপালচৌকি, বেকিচৌকি, গোবিন্দ সরোবর ও মরাচৌকি। এছাড়া রাজবাড়ি এলাকার মধ্যস্থলে রয়েছে শ্যামসাগর নামে একটি বিশাল পুকুর। পরিখা বেষ্টিত এই রাজবাড়ির মোট স্থলভাগের পরিমাণ ২৫.৯৩ একর (কেন্দ্রস্থলের ৬.০০ একর বিশিষ্ট শ্যামসাগর ব্যতীত)। পুঠিয়া রাজবাড়ি ও তার আশেপাশে এখানকার জমিদারদের নির্মিত বেশ ক‘টি নয়নাভিরাম মন্দির এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শরীক বিভক্তির পর পাঁচ আনি ও চার আনি রাজপ্রাসাদ আলাদাভাবে নির্মিত হয়। এই দুটি প্রাসাদ ছাড়া অন্যান্য শরীকের ঘরবাড়ির কোন চিহ্ন বর্তমানে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here