বগুড়ার দর্শনীয় স্থান সমূহ।Places Of Interest In Bogra

0

মহাস্থানগড়

মহাস্থানগড় (Mahasthangarh) বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। প্রাচীন পুন্ড্রনগরীতে প্রায় ৪০০০ বছর পুরাতন স্থাপনা রয়েছে। মাউর‌্যা এবং গুপ্ত রাজারা মহাস্থানগড়কে প্রাদেশিক রাজধানী হিসাবে ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে পাল রাজা পুন্ড্রনগর বা মহাস্থানগরকে মূল রাজধানী হিসাবে ব্যবহার করেন। প্রাচীন পুন্ড্রনগরীর ধংসস্তুপ দেখতে চাইলে যেতে হবে বগুড়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর পশ্চিমপ্রান্তে।রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, মালদাহ, রাজশাহী অর্থাৎ বরেন্দ্র অঞ্চল পুন্ড্রদের আদি বসবাসের স্থান।ইতিহাস থেকে জানা যায়, ৬৯৩ সালে বিখ্যাত চীনা ভ্রমনকারী ওয়ান চুন বৌদ্ধ স্থাপনা পরিদর্শনের জন্যে পুন্ড্রনগর তথা মহাস্থানগড় আসেন। তাঁর বর্ণনা মতে, তৎকালীন সময়ে ছয় মাইল আয়তনের পুন্ড্রনগরী একটি সমৃদ্ধ জনপদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল, যা অনেকটা ব্যবলিওন, এথেন্স, মিশরের কাঠামোর মত। মুসলিম শাসনামলে ধীরে ধিরে পুন্ড্রনগরী মহাস্থানগড়ে পরিণত হয়।

পোড়াদহ মেলা

বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার ইছামতি নদী তীরবর্তী পোড়াদহ নামক স্থানে প্রতিবছর এক ঐতিহ্যবাহী লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়। প্রায় ৪০০ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আয়োজিত প্রাচীন এই মেলাটি পোড়াদহ মেলা (Poradaha Mela) নামে পরিচিত। বগুড়া শহর থেকে পোড়াদহ মেলা প্রাঙ্গণের দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। পোড়াদহ মেলা কত সালে শুরু হয় সেই সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা না গেলেও ১৬শ শতাব্দীকে এই মেলার উত্থান হিসাবে মানা হয়। জানা যায়, প্রায় চারশত বছর আগে হঠাৎ মেলার স্থানে থাকা বটবৃক্ষের নিচে এক সন্ন্যাসীর আগমণ ঘটে। ধীরে ধীরে সেখানে অন্যান্য সন্ন্যাসীরাও আসতে শুরু করে এবং এখানে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করা হয়। ফলে জায়গাটি এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়েরর কাছে তীর্থস্থানে পরিণত হয়। তখন থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মাঘ মাসের শেষ তিন দিনের মধ্যে আগত বুধবার সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন শুরু করে। সন্ন্যাসী পূজায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভক্তদের সমাগত হতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে পূজা অনুষ্ঠানের দিনটি গ্রাম্য মেলার রূপ লাভ করে। পরবর্তীতে সন্ন্যাসীরা এ স্থান ত্যাগ করে চলে গেলেও স্থানীয় হিন্দুরা সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে চলছে।

মানকালীর কুণ্ড

বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার এক অন্যতম নিদর্শন মানকালীর কুণ্ড (Mankali’s Kund)। ষাটের দশকের শুরুর দিকে তৎকালীন পাকিস্থান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মহাস্থানগড়ের উঁচু ঢিলার উপর বিদ্যমান এই নিদর্শনকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে নথিভুক্ত করে।মহাস্থানগড়ের মজা পুকুরের পূর্ব পাড়ে অবস্থিত মানকালী কুণ্ড ঢিবিতে প্রবেশ করলে প্রথমেই নজরে পড়ে ঢিবির তথ্য সম্বেলিত একটি সাইনবোর্ড, তার পাশে রয়েছে ছোট্ট একটি জলাশয়। এই জলাশয়কে “কুণ্ড বা কূপ” বলা হয়। জলাশয় ও ঢিবিকে একত্রে মানকালীর কুণ্ড নামকরণ করা হয়েছে। ধারনা করা হয়, এই স্থানে সর্বপ্রথম রাজা মানসিংহ ও তার ভাই তানসিংহ একটি মন্দির নির্মাণ করেন, পরবর্তীতে ঘোড়াঘাটের জমিদারগণ এখানে মসজিদ নির্মাণ করেন। আবার এই একই স্থান থেকে পাওয়া জৈন প্রতিমা দেখে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিকগণ ধারনা করেন, এক সময় ঢিবিটি জৈন ধর্ম গুরুদেরও আবাসস্থল ছিল।

রানী ভবানীর বাপের বাড়ি

বগুড়া জেলার সান্তাহারের ছাতিয়ানগ্রামে রানী ভবানীর জন্মগ্রহণ করেন। সংস্কার এবং সংরক্ষণের অভাবে রানী ভবানীর বাপের বাড়ি (Rani Bhabani’s Father House) আজ ধ্বংসের পথে। প্রচলিত আছে সপ্তদশ শতাব্দীতে ছাতিয়ানগ্রামের জমিদার আতারাম চৌধুরী ছিলেন নিঃসন্তান। আতারাম চৌধুরী সন্তান লাভের আশায় বাড়ীর কাছে নির্জন পুকুর পাড়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পূজা-অর্চনা করেন। পরবর্তীতে তার স্ত্রীর গর্ভে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম হলে তার নাম রাখা হয় ভবানী। জমিদার যেস্থানে সাধনা করে সিদ্ধি লাভ করেন সে জায়গাটি সিদ্ধেশ্বরী নামে পরিচিত হয়ে উঠে।ভবানীর ১০ বছর বয়সে নাটোরের রাজকুমার রামকান্তের সাথে ভবানীর বিয়ের প্রস্তাব আসে। ভবানীর ৩টি শর্তে বিয়েতে রাজী হন। ভবানীর শর্ত ছিল বিয়ের পর আরও এক বছর পর্যন্ত তিনি তার বাবার বাড়ীতেই থাকবেন। আর সেই এক বছরে ছাতিয়ানগ্রামে প্রতিদিন একটি করে পুকুর খনন করে দিতে হবে। ছাতিয়ানগ্রাম থেকে নাটোর পযর্ন্ত লাল সালুর কাপড় দিয়ে ছাউনীযুক্ত নতুন রাস্তা তৈরী করতে হবে। আর এলাকার প্রজাদের ভূমিদান করে তাদের স্বাবলম্বী করতে হবে। ভবানীর শর্তগুলো পালনের চিহ্ন ছাতিয়ানগ্রামে আজও রয়েছে।

খেরুয়া মসজিদ

বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ (Kherua Mosque) বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার খন্দকার টোলা এলাকায় অবস্থিত। ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল খেরুয়া মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে মসজিদের নামকরণ নিয়ে সঠিক কোন ইতিহাস জানা যায়নি।প্রায় ৪৩০ বছর পুরনো সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে নির্মিত খেরুয়া মসজিদটি চওড়া দেয়াল এবং মিনারের ভিতের কারণে আজো টিকে রয়েছে। চুন-সুরকির ব্যবহারে তৈরী ১.৮১ মিটার চওড়া লাল ইটের দেয়ালের উপর নির্মিত ছাদে অর্ধ গোলাকৃতির তিনটি গম্বুজ আছে। বাইরের দিক দিয়ে মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৭.২৭ মিটার এবং প্রস্থ ৭.৪২ মিটার। মসজিদের পূর্ব দিকের দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর-দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি করে খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে। আর পশ্চিম দেয়ালের আছে তিনটি কারুকার্যখচিত মেহরাব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here