শেরপুরের দর্শনীয় স্থান সমূহ।Places Of Interest In Sherpur

0

বনরাণী ফরেষ্ট রিসোর্ট

শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার গান্ধিগাঁওয়ে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে জঙ্গল ঘেরা অপরুপ প্রাকৃতিক পরিবেশে আধুনিক পর্যটন স্থাপনা বনরাণী ফরেষ্ট রিসোর্ট (Bonorani Forest Resort) নির্মাণ করা হয়েছে। গজনী অবকাশ কেন্দ্র হতে এই ব্যক্তিগত মালিকানাধীন পিকনিক স্পট বনরাণী ফরেষ্ট রিসোর্ট পায়ে হেঁটে যেতে মাত্র ১০/১২ মিনিট সময় লাগে। পাহাড়ী ছড়া, সবুজ বন আর বন্য হাতির বিচরনের রোমান্চকর এই রিসোর্টে ক্যাম্প ফায়ার, BBQ ডিনার আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া রিসোর্টের ব্যবস্থাপনায় ৩ বেলা স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।




শের আলী গাজীর মাজার

শেরপুর জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে গাজীর খামারের কাছে গাজীর দরগা হিসেবে পরিচিত শের আলী গাজীর মাজার (Sher Ali Gaji Majar) অবস্থিত। শের আলী গাজী ছিলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর সূচনা লগ্নে শেরপুর পরগনার শেষ মুসলিম জমিদার। তিনি দীর্ঘ ২১ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তাঁর নামানুসারে শেরপুর জেলার নামকরণ করা হয়। মৃত্যুর পর শের আলী গাজীকে খামারের গীদদাপাড়া ফকির বাড়িতে সমাহিত করা হয়। এ স্থানটিই শের আলী গাজীর মাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।প্রতিবছর ১ ফাল্গুন শের আলী গাজীর মাজারে বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠিত হয় এবং মাজার প্রাঙ্গনে জমজমাট গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্ত ও অসংখ্য মানতকারীর মাজারে আগমন ঘটে।




পানিহাটা-তারানি পাহাড়

শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী রামচন্দ্রকুড়া এলাকায় সারি সারি পাহাড় দিয়ে ঘেরা পানিহাটা ও তারানি গ্রামের অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত অঞ্চল পর্যটকদের কাছে পানিহাটা-তারানি পাহাড় (Panihata-Tarani Hill) হিসেবে সুপরিচিত। তারানি পাহাড়ের উত্তরে রয়েছে মেঘের আবছা আবরণে ঢাকা ভারতের তুরা পাহাড়। তুরা পাহাড়ের দূরের টিলাগুলো যেন মেঘের রাজ্যের সাথে মিতালি করে চারপাশে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। তুরার অববাহিকা থেকে সামনের পশ্চিম দিকে বয়ে চলেছে পাহাড়ী ভোগাই নদী। এ নদীর স্বচ্ছ পানির নিচে রোদের আলোয় চিকচিক করা নুড়ি পাথর আর শত ফুট উঁচুতে থাকা সবুজে জড়ানো পাহাড় চারপাশে এক ভিন্নধর্মী সৌন্দর্যের আবহ তৈরি করেছে।তুরা নদীর পাশে আরও আছে খ্রিষ্টানদের উপসানালয়, ছোট একটি চিকিৎসা কেন্দ্র, বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের থাকার আবাসিক হোস্টেল। প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়ার পাশাপাশি মেঘ ও পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতি বছর দূর দূরান্ত থেকে অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা এই জায়গায় ঘুরতে আসে।




পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি

শেরপুর জেলা সদরে অবস্থিত জমিদার সতেন্দ্র মোহন চৌধুরী ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরীর বাড়িটি পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি (Pone Ten Ani Jamidar Bari) হিসাবে সুপরিচিত। গ্রিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই বাড়িটি অন্যান্য জমিদার বাড়ি থেকে আলাদা। যদিও কালের বিবর্তনে জমিদার বাড়ির অনেক সৌন্দর্যই ম্লান হয়ে গিয়েছে তবে জমিদার বাড়ির চমৎকার নকশাকৃত দৃষ্টিনন্দন স্তম্ভগুলো আজো জমিদারী আমলের ঐতিহ্য বহন করে চলছে। স্তম্ভগুলো চতুষ্কোণ বিশিষ্ট এবং এতে বর্গাকৃতির ফর্ম ব্যবহার করা হয়েছে।পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ির ভিতরে অবস্থিত মন্দিরের সুপ্রশস্থ বেদি, প্রবেশদ্বারের দুই প্রান্তে অলংকৃত স্তম্ভ ও কার্নিশের মোটিভও নজরে পড়ে। বাড়ির দেয়ালের আস্তরণ ও পলেস্তারে চুন- সুড়কীর ব্যবহার লক্ষণীয়। জমিদার বাড়ির ছাদ গতানুগতিক লোহার রেলিংয়ের সাথে চুন সুড়কীর ঢালাই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

মাইসাহেবা জামে মসজিদ

শেরপুর জেলা শহরে প্রবেশের পর সর্বপ্রথম ঐতিহ্যবাহী মাইসাহেবা জামে মসজিদ (Mai Saheba Jame Masjid) নজরে আসে। আনুমানিক ২৫০ বছর পূর্বে নির্মিত এই মসজিদেটি বিভিন্ন সময় সংস্কার করা হলেও তাতে ঐতিহ্যের ছাপ স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়। শেরপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র শেরপুর সরকারি কলেজের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত মাইসাহেবা মসজিদের দুইটি সুউচ্চ মিনার শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দৃষ্টিগোচর হয়।মাইসাহেবা জামে মসজিদের নামকরণ নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে। তৎকালীন সময় শেরপুরের তিনআনি জমিদার মুক্তাগাছার জমিদার কে নিমন্ত্রণ জানান। মুক্তাগাছার জমিদার তার বদৌলতে শেরপুরের কিছু জায়গা চান। শেরপুরের জমিদার মসজিদের এই জায়গাটি মুক্তাগাছার জমিদার কে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং হাতি দিয়ে সেখানে বিদ্যমান খাজনা তোলায় ব্যবহৃত ঘর ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন। কিন্তু হাতিকে নিয়ে বার বার ঘরের কাছে যাওয়া মাত্রই হাতি সালাম দিয়ে বসে পড়ে। এই কথা শুনে তিনআনি জমিদার নিজে এসে দেখতে পান এই ঘরের ভিতর একজন নারী ইবাদতে মগ্ন আছেন। জমিদার তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং ক্ষমা চেয়ে ফেরত যান। সেই নারীর নাম ছিল মাই সাহেবা। মাই সাহেবার মৃত্যুর পর জমিদার এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করে মাইসাহেবা জামে মসজিদ নামকরণ করেন।

রাজার পাহাড়




পাহাড়, নদী পরিবেষ্টিত শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলায় ঢেউফা নদীর তীরে অবস্থিত একটি অপূর্ব পর্যটন কেন্দ্র রাজার পাহাড় (Rajar Pahar)। রাজার পাহাড় নিয়ে বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত থাকলেও প্রাচীন রাজ বংশের সম্ভ্রান্ত কোন রাজার অবস্থানের কারণে যে এই রাজার পাহাড় নামের সৃষ্টি তা বুঝতে মোটেও অসুবিধা হয় না। গারো পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু রাজার পাহাড়ের চূড়ায় শতাধিক হেক্টর সমতল ভূমি রয়েছে। আকাশ ছোঁয়া বিশাল রাজার পাহাড়ের নৈস্বর্গিক দৃশ্য মনকে আরও প্রাকৃতিপ্রেমী করে তোলে।রাজার পাহাড়ের কাছে রয়েছে বিডিয়ার ক্যাম্প, ওয়ার্ল্ড ভিশন, বিট অফিস, কারিতাস এবং রাবার বাগান। রাজার পাহাড়ের উপর হতে দূরের ভারতের কিছুটা সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। শ্রীবরদী উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই রাজার পাহাড় এই অঞ্চলের মানুষের কাছে অন্যতম বিনোদন স্পট হিসাবে সুপরিচিত। অপরূপ প্রকৃতি ও বাবেলাকোনায় আদিবাসী জনপদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও জীবনধারা এখানে আগত দর্শনার্থীদের সমানভাবে আকর্ষণ করে। এছাড়া এখানে বাবেলাকোনা কালচারাল একাডেমি, যাদুঘর, লাইব্রেরী, গীর্জা, মন্দির এবং অসংখ্য প্রাকৃতিক নির্দশন রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here