চাঁপাইনবাবগঞ্জের দর্শনীয় স্থান সমূহ।Places Of Interest In Chapainawabganj

0

বাবুডাইং

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ঝিলিম ইউনিয়নে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পাহাড়ি বনভূমিতে বাবুডাইং পিকনিক স্পট (Babu Daing Picnic Spot) অবস্থিত। রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে প্রায় ৩০০ একর জায়গা জুড়ে বরেন্দ্র অঞ্চলের এই পাহাড়ি বনভূমি গঠিত। বনের শেষ প্রান্তে ভূখণ্ড থেকে বেশ উপরে অবস্থিত গোল চত্বর থেকে পূর্ব দিকে গড়ে উঠা টিলার মতো উঁচু-নিচু অংশটিই বাবুডাইং হিসেবে পরিচিত। এই চত্বর থেকে নিচে তাকালেই নজরে পড়বে পর্যটকদের মুগ্ধ করার মতো ঢেউ খেলানো অদ্ভুত সুন্দর বন। এই বন পেরিয়ে সামনে আগালে গাছে গাছে থাকা জানা-অজানা বিভিন্ন পাখী ও বেশ কিছু মনোরম ঝর্ণার দেখা মিলবে। এছাড়া বনের মাঝে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ লেকে একটি ক্রসড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। এই ড্যামের মাধ্যমে লেকের পানি ব্যবহার করে জমিতে সেচ দেওয়া হয়। প্রবল বেগে প্রবাহিত এই ড্যামের পানি দূর থেকে দেখলে অনেকটাই ঝর্ণার মতো দেখায়। এই ড্যাম পার হয়ে দুই পাশের ঘাসের মাঝ দিয়ে হেঁটে বাবুডাইং পিকনিক স্পটে যেতে হয়।বাংলাদেশ সরকারের অধীনে নির্মিত বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় ঘেরা এই পিকনিক স্পটটিতে অবস্থিত বেশকিছু টিলায় আদিবাসী জনগোষ্টি বসবাস করে। প্রায় ২৫ বছর আগে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন (বিএমডিএ) কর্তৃক এই বাবুডাইং পিকনিক স্পটে প্রায় দেড় লাখ চারা রোপণ ও ৫টি পুকুর খনন করা হয়েছিল। বর্তমানে এখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।




শাহ্‌ নেয়ামত উল্লাহর মাজার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় ছোট সোনা মসজিদ থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে তাহাখানা কমপ্লেক্সে অবস্থিত হযরত শাহ্‌ নেয়ামত উল্লাহর মাজার (Hazrat Shah Niyamatullah’s Shrine) মুঘল স্থাপত্যের একটি প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে সুপরিচিত। ষোড়শ শতাব্দীর স্বনামধন্য সাধকদের মধ্যে হযরত শাহ্‌ সৈয়দ নেয়ামত উল্লাহ (রহঃ) অন্যতম। তিনি বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বংশধর এবং একাধারে পুরুষাক্রমিক ওলী, আলেম ও আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন। সুলতান শাহ্‌ সুজার রাজত্বকালে তিনি দিল্লির করোনিয়া থেকে বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করে ফিরোজপুরের রাজমহলে উপস্থিত হন। বঙ্গ সুলতান শাহ্‌ সুজা তাঁকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে অভ্যর্থনা জানিয়ে বায়াত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি ফিরোজপুরের গৌড়ের উপকণ্ঠে স্থায়ীভাবে আস্থানা গড়ে দীর্ঘ ৩৩ বছর সুনামের সাথে ইসলাম প্রচার করেন। ১০৭৫ মতান্তরে ১০৮০ হিজরি সনে মারা যাওয়ার পর তাঁকে এই স্থানে সমাধিস্থ করা হয়।তাহাখানা থেকে ৩০-৩৫ মিটার উত্তরে মসজিদের প্রাচীর বেষ্টিত শাহ্‌ নেয়ামত উল্লাহর সমাধি উঁচু ভিটের উপর দণ্ডায়মান এক গম্বুজ বিশিষ্ট ইমারত। বৃক্ষ ও ইটের প্রাচীরে ঘেরা বর্গাকার নকশাকৃত এই সমাধির প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ৪৯ ফুট। সমাধির পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে ৩টি করে মোট ১২টি খিলান পথ রয়েছে। সে জন্য এই মাজার শরীফকে বারদুয়ারী বলা হয়ে থাকে। সমাধির মূল কক্ষের চারিদিকে প্রশস্থ বারান্দা, বিভিন্ন ফুল, পাতার গাছ দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, সমাধি প্রাঙ্গণে হযরত শাহ্‌ সৈয়দ নেয়ামত উল্লাহ্‌ (রহঃ)-র খাদেম ও পরিবারের সদস্যদের সমাধি রয়েছে।

তোহাখানা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহাবাজপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী মুঘল তোহাখানা (Mughal Tahakhana) বা তোহাখানা কমপ্লেক্সের অবস্থান। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে তোহাখানার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। ফার্সি শব্দ তোহাখানার অর্থ ঠান্ডা ভবন বা প্রাসাদ। মুঘল সম্রাট শাহজাহানের পু্ত্র সুলতান শাহ সুজা তাঁর মুর্শিদ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর শীতকালীন বসবাসের সুবিধার্থে ফিরোজপুরে তাপনিয়ন্ত্রিত ৩ তলা বিশিষ্ট এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র মতে, ১৬৩৯-১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এই তোহাখানাটি নির্মিত হয়।শাহ সুজা তোহাখানায় অবকাশ যাপনের জন্য আসলে ইমারতের মাঝামাঝি একটি সুপ্রশস্ত কক্ষে অবস্থান করতেন। তোহাখানা কমপ্লেক্সের ভেতরে বেশকিছু নাম না জানা সমাধি রয়েছে। এগুলো হযরত শাহ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহর খাদেম বা সহচর বলে মনে করা হয়। তোহাখানা কমপ্লেক্সের মধ্যে আরো আছে তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ, কুপ এবং এক গম্বুজ বিশিষ্ট সমাধি।




তিন গম্বুজ মসজিদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের ফিরোজপুরে মোঘল আমলের অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা তিন গম্বুজ মসজিদ (Tin Gombuj Masjid) অবস্থিত। মধ্যযুগের প্রখ্যাত ইসলাম প্রচারক শাহ্‌ সৈয়দ নেয়ামতউল্লাহ্‌কে উদ্দেশ্য করে বঙ্গ সুলতান শাহ্‌ সুজা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এই ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি শাহ্‌ নেয়ামত উল্লাহ্‌ মসজিদ হিসেবেও সুপরিচিত।আয়তাকৃতি তিন গম্বুজ মসজিদে বিশাল একটি মসজিদ ঘর, ৩টি মেহরাব এবং সামনের দিকে ৩টি প্রবেশ পথ রয়েছে। ৩টি প্রবেশ পথের মাঝখানের দরজাটি অপেক্ষাকৃত বৃহদাকৃতির। মসজিদের কাছে শাহ্‌ নেয়ামত উল্লাহ্‌র সমাধি এবং সুলতান শাহ্‌ সুজা কর্তৃক নির্মিত মোঘল আমলের একটি দ্বিতল ইমারত রয়েছে। ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৮ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট সুলতান শাহ্‌ সুজার ইমারতটি “তাহাখানা” নামে পরিচিত। তিন গম্বুজ মসজিদ, প্রাসাদ এবং শাহ্‌ নেয়ামত উল্লাহ্‌র সমাধি তাহাখানা কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত। সুলতান শাহ্‌ সুজা তাঁর মোরশেদ হযরত শাহ্‌ নেয়ামত উল্লাহর শীতকালে বসবাসের সুবিধার্থে এই ভবনটি নির্মাণ করেছিলেন।

খনিয়াদিঘি মসজিদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে অবস্থিত খনিয়াদিঘি মসজিদ (Khoniadighi Mosque) বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর হতে খনিয়াদিঘি মসজিদের দূরত্ব ৩৬ কিলোমিটার। স্থানীয় মানুষের কাছে প্রাচীন এই মসজিদটি রাজবিবি মসজিদ এবং চামচিকা মসজিদ নামে সুপরিচিত। ১৪৫০ থেকে ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দে গৌড় রাজধানী থাকাকালীন সময়ে খনিয়াদীঘি মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।খনিয়াদিঘি মসজিদের দৈর্ঘ ৬২ ফুট এবং প্রস্থ ৪২ ফুট। টেরাকোটা ও ইটের নকশায় অলংকৃত মসজিদের পিলার ও কার্নিশে পাথরের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। মুঘল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত খনিয়াদিঘি মসজিদের মূল বর্গাকৃতির কক্ষের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ২৮ ফুট। মসজিদের দেয়াল প্রায় ৭ ফুট চওড়া ফলে প্রচন্ড গরমেও মসজিদের ভিতরের পরিবেশ শীতল থাকে। মূল মসজিদের ছাদের একটি বিশালাকার গম্বুজ এবং বারান্দার ছাদে ৩ টি ছোট আকৃতির গম্বুজ রয়েছে। আর মসজিদের পাশে অবস্থিত বিশালাকারের দিঘীর নাম খনিয়া দিঘি।

কানসাট আম বাজার

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে বলা হয় আমের রাজধানী। আর সেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে বসে বাংলাদেশের বৃহত্তম আমের বাজার। প্রতি আমের মৌসুমে দেশের এই বৃহৎ আম বাজারে প্রায় শত কোটি টাকার উপরে আমের বেচাকেনা হয়। আমের সময়ে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমে থাকে এই আম বাজার। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনেক আমের বাজার থাকলেও কানসাট আমের বাজার পাইকারী বাজারের জন্যে সবচেয়ে বড় এবং বিখ্যাত। এ যেন এক আমের রাজ্য। আম বাজার ঘুরে দেখার সাথে সাথে আপনি চাইলে কিনে খেতে পারবেন নানা রকম তরতাজা পাকা আম। এছাড়া ঝুড়িভর্তি করে আম কিনে নিতে পারবেন নিজের জন্যে।




ছোট সোনা মসজিদ

রাজশাহী বিভাগের  জেলায় শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে সুলতানি স্থাপত্যের রত্ন হিসাবে আখ্যায়িত ছোট সোনা মসজিদ (Choto Sona Mosque) অবস্থিত। ছোট সোনা মসজিদের প্রধান প্রবেশ পথের উপরে স্থাপিত শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৪৯৩ থেকে ১৫১৯ সালের মধ্যে সুলতান হুসাইন শাহর শাসনকালে জনৈক মনসুর ওয়ালী মুহম্মদ বিন আলী ছোট সোনা মসজিদটি নির্মাণ করেন। প্রচলিত আছে, একসময় মসজিদের গম্বুজগুলো সোনা দিয়ে মোড়ানো ছিল এবং সে কারণেই মসজিদটি সোনা মসজিদ হিসাবে পরিচিতি পায়। আর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছে ভারতে আয়তনে বড় আরেকটি সোনা মসজিদ থাকায় এই মসজিদটি সকলের কাছে ছোট সোনা মসজিদ নামে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠে। মসজিদের সামনের আঙ্গিনা পশ্চিম থেকে পূর্বে ৪২ মিটার এবং দক্ষিণ থেকে উত্তরে ৪৩.৫ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।সোনা মসজিদে গ্রানাইটের টালি ব্যবহৃত হয়েছে। সুলতানি স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত ছোট সোনা মসজিদে ইটের তৈরি ১২ টি গম্বুজ রয়েছে। আর মসজিদের চারপাশের দেওয়াল প্রায় ৬ ফূট চওড়া এবং ভেতর ও বাহিরে পাথরের টালি দিয়ে আবৃত। মসজিদের চার কোনায় ৪ টি আটকোনা মিনার রয়েছে। ছোট সোনা মসজিদের পূর্বে ৫ টি এবং দক্ষিণ ও উত্তর দিকে ৩ টি করে ৬ টি খিলান প্রবেশ পথ রয়েছে। পূর্ব দিকের প্রবেশ পথের সোজাসুজি পশ্চিম দিকের দেয়ালে নকশা খচিত ৫ টি মিহরাব আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here