সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ।Places Of Interest In Sylhet

0

রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য





সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য (Rema Kalenga Reserved Forest) বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বনাঞ্চল হিসাবে খ্যাত। ১৯৮২ সালে প্রায় ১৭৯৫ হেক্টর আয়তনের এ বনভূমি রেমা কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বনবিভাগের কালেঙ্গা রেঞ্জের অন্তর্ভুক্ত রেমা, কালেঙ্গা ও ছনবাড়ীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যের পরিধি বিস্তৃত। রেমা-কালেঙ্গা অভয়াশ্রমে প্রায় ৬৩৮ প্রজাতির বৃক্ষরাজি, প্রায় ৬২ স্তন্যপায়ী, উভচর ও সরীসৃপ প্রাণী এবং প্রায় ১৬৭ প্রজাতির পাখির আবাস।বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে আছে বিরল প্রজাতির মালায়ন বড় কাঠবিড়ালী, কুলু, রেসাস ও লজ্জাবতী বানর, মায়া হরিণ, মুখপোড়া হনুমান, উল্লুক, চশমা হনুমান, মেছোবাঘ, গন্ধগোকুল, বন্যশুকর, সজারু, বেজি ও নানা প্রজাতির সাপ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মধ্যে হিল ময়না, মথুরা, ভীমরাজ, লাল মাথা কুচকুচি, টিয়া, সিপাহি বুলবুল, চিল, বসন্তবৌরি, শকুন, বনমোরগ, বন্যশুকর, পেঁচা, ঈগল ও মাছরাঙ্গা অন্যতম।রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্যে ছবির মতো সুন্দর ৩০ মিনিট, ১ ঘন্টা ও ৩ ঘন্টার তিনটি ট্রেইল রয়েছে। একনজরে বনের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আছে একটি সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। আর পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ঘিরে রয়েছে একটি মনোরম লেক। আছে ত্রিপুরা, সাঁওতাল, তেলেগু ও উড়ং সম্প্রদায়ের আদিবাসীদের পাড়া। এছাড়া বনের বিজিবি ক্যাম্পের কাছে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নায়েক আব্দুল মান্নান বীরউত্তমের সমাধি রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এই স্থানে এই বীর যোদ্ধা শাহাদাৎ লাভ করেন। সমাধির পাশে সেগুন গাছে এখনও গুলির চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।

শংকরপাশা শাহী মসজিদ




হবিগঞ্জ জেলার রাজিউড়া ইউনিয়নে পঞ্চাদশ শতাব্দীর প্রাচীন শংকরপাশা শাহী মসজিদ (Sankarpasha Shahi Masjid) অবস্থিত। সুলতানী আমলের অন্যতম নিদর্শন এই মসজিদ তৈরীতে পোড়ামাটির ইট ব্যবহার করা হয়েছে। প্রায় ৬ একর জায়গা জুড়ে একটি টিলার উপর স্থাপিত লাল রঙের শংকরপাশা শাহী মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে লাল টিলা মসজিদ হিসেবেও সুপরিচিত। ১৫১৩ সালে বিখ্যাত সুফি দরবেশ শাহ মজলিস আমিন (রা.) এই মসজিদের নির্মাণ শুরু করেলেও পরবর্তীতে মুসলিম স্বনামধন্য শাসনকর্তা সুলতান আলাউদ্দিন হোসাইন শাহের আমলে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
টেরাকোটার নকশাকৃত চমৎকার নির্মাণশৈলীর এই মসজিদ কালের বিবর্তনে এক সময় বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছিল। উক্ত এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠলে চাষাবাদের প্রয়োজনে এই মসজিদটি আবিষ্কৃত হয়। এক চালা ধরণের চার গম্বুজ বিশিষ্ট শংকরপাশা শাহী মসজিদের দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থ ২১ ফুট ৬ ইঞ্চি। মসজিদের পূর্ব-উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়াল প্রায় ৫ ফুট ও পশ্চিমের দেয়াল প্রায় দশ ফুট পুরুত্ব বিশিষ্ট। আর মসজিদের সামনের বারান্দাটির প্রস্থ প্রায় ৩ ফুট। মসজিদে প্রধান কক্ষের চারকোণে চারটি ও বারান্দার দুই কোণে দুইটি সহ মোট ৬টি কারুকার্যখচিত স্তম্ভ এবং ১৫টি দরজা রয়েছে। এছাড়া মসজিদের দক্ষিণ দিকে আছে একটি বড় দিঘী। বর্তমানে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমেই মসজিদটির সৌন্দর্য ম্লান হচ্ছে। বিশেষ দিনগুলোতে মসজিদে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লির সমাগম ঘটে।

গ্রীনল্যান্ড পার্ক


হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার রানীগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত সবুজে মোড়া দৃষ্টিনন্দন গ্রীনল্যান্ড পার্ক (Greenland Park) একটি জনপ্রিয় পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র। ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠা এই পার্কে বাঁশের তৈরী ঝুলন্ত সাকো, গোল চত্বর, লেক, নান্দ্যনিক রেস্টুরেন্ট ছাড়াও পিকনিক আয়োজনের সকল ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রীনল্যান্ড পার্কের লেকের জলে নৌকা দিয়ে ঘুরতে ও সাতার কাটতে পারবেন।
অসংখ্য বৃক্ষে ঘেরা এই পার্কে বিলুপ্তপ্রায় বেশকিছু উদ্ভিদ সম্পর্কে তথ্য সহ আছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সমাহার। গ্রীনল্যান্ড পার্কের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কারণে পরিবার নিয়ে পার্কে বেড়াতে আসলে বাড়তি দুশ্চিন্তা করার সুযোগ নেই। এছাড়া পিকনিক করতে বা ঘুরতে আসলে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে পার্কে প্রবেশের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। আর পার্কের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পিকনিকের খাবারের ব্যবস্থা করা যায়। গ্রীনল্যান্ড পার্কে জনপ্রতি প্রবেশ টিকেটের মূল্য ২০ টাকা।




দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী পাহাড়ে ৫ তারকা মানের দ্যা প্যালেস রিসোর্ট (The Palace Luxury Resort) অবস্থিত। রিসোর্টের চারপাশে সবুজ পাহাড়ের সমারোহ আর মেঘের লুকোচুরি খেলা মনকে সহজেই প্রফুল্য করে তোলে। প্রায় ১৫০ একর পাহাড়ি ভূমিতে ৩০ হাজার গাছ, ঝর্ণা, চা বাগান, রাবার বাগান দিয়ে সাজিয়ে পরিপূর্ণ করে দ্যা প্যালেস রিসোর্টের ভিলা গুলো গড়ে তোলা হয়েছে। চমৎকার নির্মাণশৈলী ও মনোরম পরিবেশের এই রিসোর্ট সত্যিকার অর্থেই যেন এক রাজপ্রাসাদ। হানিমুন কিংবা পরিবার নিয়ে নিরিবিলিতে ছুটির সময় কাটাতে চাইলে দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট একটি অতুলনীয় স্থান।

বিথাঙ্গল বড় আখড়া




হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় বিতঙ্গল গ্রামে বিথাঙ্গল বড় আখড়া (Bithangal Bara Akhara) বা বিতঙ্গল আখড়ার অবস্থান। বৈষ্ণব ধর্মালম্বীদের অন্যতম তীর্থস্থান হিসাবে পরিচিত এই আখড়াটি ষোড়শ শতাব্দীতে রামকৃষ্ণ গোস্বামী নির্মাণ করেন। মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত বিথাঙ্গল বড় আখড়ায় ১২০ জন বৈষ্ণবের জন্য পৃথক কক্ষ রয়েছে। এখানে যথাযোগ্য ভাবগাম্ভীর্য্যের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন উৎসবের মধ্যে আছে আষাড় মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রথযাত্রা, ফাল্গুন মাসে দোল পূর্ণিমার ৫ দিন পর পঞ্চম দোল উৎসব, কার্তিক মাসের শেষ দিনে ভোলা সংক্রান্তিতে কীর্তন, চৈত্রের অষ্টমী তিথিতে পূণ্যস্নান ও বারুনী মেলা ইত্যাদি।বিথাঙ্গল বড় আখড়ার অন্যতম নিদর্শনের মধ্যে সুসজ্জিত রথ, পিতলের সিঙ্ঘাসন, ২৫ মণ ওজনের শ্বেত পাথরের চৌকি, রৌপ্য পাত্র ও সোনার মুকুট উল্লেখযোগ্য। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিথাঙ্গল বড় আখড়া পরিদর্শন করতে আসেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here