ময়মনসিংহের দর্শনীয় স্থান সমূহ।Places Of Interest In Mymensingh

0

ব্রহ্মপুত্র নদ

এশিয়া মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদীর নাম ব্রহ্মপুত্র নদ (Brahmaputra River)। সংস্কৃত শব্দ ব্রহ্মপুত্র শব্দের অর্থ ব্রহ্মার পুত্র। হিমালয়ের কৈলাস শৃঙ্গের কাছে জিমা ইয়ংজং হিমবাহ হতে সৃষ্টি হয়ে সাং পো নামে তিব্বতের পুর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে সিয়ং এবং আসামে দিহং নামে বয়ে যাবার সময় দিবং এবং লোহিত নামে আরো দুইটি বড় নদীর সাথে যুক্ত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের জন্ম। এরপর কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ময়মনসিংহ অঞ্চল দিয়ে মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। উৎপত্তিস্থল থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার। ১৭৮৭ সালে ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা যমুনা নদীর জন্ম হয়।ময়মনসিংহ জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদ তার দুই পাড়ের তীরকে সাজিয়েছে আপন মমতায়। নদী তীরের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে পার্ক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র, বোটানিক্যাল গার্ডেন ইত্যাদি। এছাড়া নদীতে নৌ ভ্রমণ সহ নদীর চরে বনভোজনের সুযোগ রয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদে।




রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি

রামগোপালপুরের জমিদার যোগেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর পুত্র শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ১২৯৩ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী গৌরীপুর ও তৎসন্নিহিত এলাকার জমিদারদের ইতিহাস নিয়ে ‘বারেন্দ্রবাহ্মণ জমিদার’ নামক গ্রন্থ রচনা করে সুনাম অর্জন করেন। ধারণা করা হয়, ১৮৫০ শতকে রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি (Ramgopalpur Zamidar Bari) নির্মাণ করা হয়েছিল। যদিও রামগোপালপুর জমিদার বংশের মূল প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। গৌরীপুরের জমিদারির বয়স প্রায় দেড়শ বছর হলেও ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাজনের সময় গৌরীপুরের অধিকাংশ জমিদার দেশ ত্যাগ করেন। ফলে কালের বিবর্তণে পরিচর্যার অভাবে রামগোপালপুর জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যও বিলুপ্তির পথে।একসময় জৈলুশপূর্ণ রামগোপালপুর জমিদার বাড়ির চিড়িয়াখানা, বাগানবাড়ি, রঙ্গম, সাগরদিঘি, কারুকার্যময় পুকুর ঘাট এবং ৩ তলা বিশিষ্ট তোরণ বর্তমানে কেবলই স্মৃতি। জমিদার বাড়ির দুইটি প্রবেশ দ্বার, ধ্বংসপ্রাপ্ত দেয়াল এবং মন্দির ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। জমিদার বাড়ির মন্দিরে এখনো বিভিন্ন পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

বিপিন পার্ক

ময়মনসিংহ জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত বিপিন পার্ক (Bipin Park) প্রায় ২০০ বছরের পুরাতন এক ঐতিহ্যবাহী বিনোদন কেন্দ্র। ঐতিহ্যের ভগ্নদশার সংস্কার করে সীমিত পরিসরে থিমপার্ক রূপে কংগ্রেস জুবিলি রোডে পার্কটিকে পূনঃনির্মাণ করা হয়েছে। বিপিন পার্কে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঝর্ণা, বিভিন্ন স্থাপনা, ফুলের বাগান, পায়ে হাটা পথ, সীমানা প্রাচীর ও বসার বেঞ্চ।




বোটানিক্যাল গার্ডেন, ময়মনসিংহ

সবুজে ঢাকা শান্ত নিরিবিলি স্থান হিসাবে দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রায় ২৫ একর জায়গা জুড়ে বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ সংগ্রহ নিয়ে ১৯৬৩ সালে বোটানিক্যাল গার্ডেন (Botanical Garden) প্রতিষ্ঠা করা হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা বোটানিক গার্ডেনস কনজারভেশন ইন্টারন্যাশনাল (বিজিসিআই) কতৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রথম বোটানিক্যাল গার্ডেনে ১০০০টি বড়, ১২৭৮টি মাঝারি এবং ৪৪৬৭টি ছোট বৃক্ষ সহ প্রায় ৬০০টি বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এদের মধ্যে গুটগুটিয়া, আফ্রিকান টিউলিপ, কাইজেলিয়া, স্বর্ণঅশোক, কুম্ভি, নাগেশ্বরচাপা, বুধানারিকেল, পাটেনজাবা, পাহাড়ি কাশ, কাইকা, সিন্দুরি, বিক্সা চান্দুল, এপিকাক প্রভৃতি কালাহুজা, প্যাশন ফ্রুট, ডেরিস, কালোমেঘ, মিছরিদানা, নিলকান্ত, শতমূলী, স্বর্পগন্ধা, তালমুলি, হানি সাকল, বানকলা, হলুদ কাঞ্চন, শম্ভুকাস, অনন্ত লতা, খামি, কুলানজান, কানথাকাশ, সুলতানচাপা, কাইকা, কানসুনালু, লেতকানথা, পাটিপাটা, নাক্সভোমিকা, নদাজাম, তিথিজাম, আজুলি, শাল, খারাজুরা, আরুসা, পানিকলমি, খুসখের, এলেনা, চাগাল্লাদি, মোথা, আভুকাদো, ডুরিয়ান, কোকুয়া, সাতকরা, বরমালা, মেইলাম, স্বর্ণ অশোক, রাজ অশোক, ব্রানফেলসিয়া, ক্যাকটাস, লালচিতা, নিলচিতা, গালমরিচ, মাসুকদা, গানিয়ারি, গ্রিলিরিচিডা, ফার্ন হরিণসিংঙ্গা, আতমরা, বেরিয়া, বেহেলাতদ, ফার্ন কড়ই, গার্ডেনিয়া, ব্যামবুস, রনডেলিটিয়া, টাবেবুইয়া, ডুমবিয়া, বনজারি, জয়ত্রী, জয়পাল, নাগনাথ, জাচারান্দা, বন্য খেজুর, স্কাফেলারা, রাভেনিয়া, জাকুটিভাসা, ভেরিগেটেট মন্ডার,হারগুজা কান্তাপ্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে থেকে একজন দুই বছরের জন্য গার্ডেন কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করেন। এই বোটানিক্যান গার্ডেনটি স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীদের গবেষণা কার্যক্রমের জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও আশেপাশের অন্যান্য জেলা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রছাত্রীরা উদ্ভিদজগত সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের জন্য বোটানিক্যাল গার্ডেনে আসেন। বিপুল উদ্ভিদরাজি ছাড়াও এখানে আগত দর্শনার্থীদের জন্য আছে বিভিন্ন পশু-পাখির প্রতিকৃতি এবং প্রায় অর্ধশত বিশ্রাম বেঞ্চ।




ময়না দ্বীপ

ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদীতে জেগে উঠা ব-দ্বীপটি ময়নার চর বা ময়না দ্বীপ (Moyna Deep) হিসেবে পরিচিত। একদিকে স্বচ্ছ জলের খেলা এবং অন্য দিকে বাণিজ্যিক ভাবে চাষকৃত বিশাল লেবু বাগান নিয়ে ছায়া সুনিবিড় ময়না দ্বীপ যেন সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। জানা যায়, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী ময়না মিয়া এখানে বাস করতো। অবসরে গাছের তলায় বসে তিনি বাঁশি বাজিয়ে সময় কাটাতেন। বাঁশির সুমধুর সুর শুনে অনেকেই ময়না মিয়ার সাথে দেখা করতে আসতো। ময়না মিয়া তাদেরকে ব্রিটিশদের তাড়ানোর নানা বুদ্ধি শিখিয়ে দিতেন। এভাবে আস্তে আস্তে লোকে মুখে এই চরের নাম হয়ে গেল ময়না চর বা ময়না দ্বীপ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here